কৃষি জমি নির্বাচন ও তৈরি
কৃষি জমি নির্বাচন ও তৈরি
কৃষি জমি নির্বাচন ও তৈরি করার সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত।
প্রাকৃতিক শর্তসমূহ: আপনার এলাকার আবহাওয়া, ওজন, তাপমাত্রা ইত্যাদি প্রাকৃতিক শর্তসমূহ গবেষণা করে নিন। এগুলি আপনার ফসলের জন্য সঠিক হতে পারে।
অবস্থান এবং সুরক্ষা: আপনার জমির অবস্থান এবং সুরক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সম্ভব হয়, জমি জনপ্রিয় রাস্তা থেকে দূরে ও অন্যান্য আপাত সময়ে রয়েছে তা আপনার সুরক্ষার জন্য ভাল হতে পারে।
সার ব্যবহার: আপনার জমি জন্য আপনার সারের পরিমাণ এবং ধরণ নির্ধারণ করুন। এটি ফসলের উৎপাদনকে বাড়াতে সাহায্য করে এবং মাটির পুনর্নিমাণে সাহায্য করে।
জমির বাজেট: আপনার জমির জন্য একটি বাজেট তৈরি করুন। এটি সাধারণত মাটি পরিষ্কার করতে, বীজ কিনতে, সার কিনতে, ফসল চাষ করতে এবং পরিচর্যা করতে প্রয়োজনীয় খরচ গুলির আলোচনা করে।
আরো পড়ুন: ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান
এই গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক ভাবে বিবেচনা করা উচিত। তাহলে আপনার জমিতে ফসল ফলাতে কোন সমস্যা হবে না কারণ আপনি তখন জমি দেখলে বুঝতে পারবেন কোন জমিতে কি ধরনের ফসল ফলানো উচিত।
আমন ধান চাষ পদ্ধতি
আমন ধান মূলত এই দুই প্রকার। রোপা আমন এবং বোনা আমন। এই দুই আমন ধানের মধ্যে মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো চারা রোপণের পদ্ধতি। রোপা আমনে চারা অন্য জমিতে উৎপাদিত হয় এবং বোনা আমনে চারা সরাসরি ক্ষেতে বোনা হয়। এছাড়া রোপা আমনে চারা রোপণের সময় পানি থাকা উচিত নয়, কিন্তু বোনা আমনে চারা রোপণের সময় পানি থাকা উচিত।
রোপা আমনে চারা রোপণের পর পানি দেওয়া শুরু করা হয়, কিন্তু বোনা আমনে চারা রোপণের পর পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোপা আমনে চারা রোপণের সময় আগাছা দূরীকরণ করা হয়, কিন্তু বোনা আমনে আগাছা দূরীকরণ করা হয় না। আমন ধান চাষের জন্য আদর্শ জমি হচ্ছে মাঝারি নীচু অথবা একদম নীচু জমি। যে কোনও জমিতেই এই ধান চাষ করা যায়। তবে এঁটেল, দেওয়াল মাটিতে ফলন ভালো হয়। সামান্য অম্ল থেকে আরম্ভ করে ক্ষারযুক্ত জমিতে চাষ করলে ভালো হয়।
বীজ নির্বাচন:
আমন ধান চাষের জন্য বিভিন্ন জাত বিদ্যমান। অনুকূল পরিবেশে চাষযোগ্য জাতগুলো হলো বিআর৪, বিআর৫, বিআর১০, বিআর১১, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭২, ব্রি ধান৭৫, ব্রি ধান৭৯, ব্রি ধান৮০, ব্রি ধান৮৭, ব্রি ধান৯০, ব্রি ধান৯৩, ব্রি ধান৯৪, ব্রি ধান৯৫। প্রতিকূল পরিবেশে চাষযোগ্য জাতগুলো হলো ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬৬, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৫১, ব্রি ধান৫২, ব্রি ধান৭৯, বিআর২২, বিআর২৩, ব্রি ধান৪৬, ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৭৩, ব্রি ধান৭৮, ব্রি ধান৯১। এই বীজগুলি সুস্থ, পূর্ণাঙ্গ এবং রোগ-জীবাণুমুক্ত হতে হবে। বীজ বপনের আগে বীজকে জীবাণুনাশক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
জমি তৈরি
সুন্দরভাবে জমি তৈরি করতে হলে জমি সমতল এবং আগাছা-মুক্ত রাখতে হবে। জমিতে ৩-৪ বার গোবর-কম্পোস্ট সার দিয়ে ভালোভাবে মাটি উত্তোলন করা উচিত তার সঙ্গে মাটির গুণগতমান পরীক্ষা করলে বেশ ভালো হয়। এছাড়াও জমিতে পর্যাপ্ত পানি জমিয়ে রাখতে হবে।
বীজ বপন:
বর্ষার শুরুতে (জুন-জুলাই) বীজ বপন করুন। বীজ বপনের জায়গাটি আদর্শভাবে লাইন পদ্ধতিতে তৈরি করলে সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা সহজ হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বীজ বপনের শেষ হলে জমিতে হালকা পানি দিয়ে জমি ভিজিয়ে ফেলুন।
আগাছা দমন:
নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করুন এতে করে ফসল রোগ বালাই থেকে মুক্ত থাকবে। এছাড়াও আগাছা দমনকারী রাসায়নিক ব্যবহার করতে পারেন এতে করে জমিতে অতিরিক্ত আগাছা জন্মাবে না।
সার ব্যবস্থাপনা:
মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সারের সঠিক পরিমাণ ব্যবহার করুন। এতে করে জমির গুণগত মান ঠিক থাকবে। সার কয়েক দফায় প্রয়োগ করুন। না হলে ফসলের ক্ষতি হবে। মাত্রা অনুযায়ী সার কিংবা কীটনাশক ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়। ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, দস্তা সার ব্যবহার করুন। এই সারগুলি ব্যবহার করলে জমি উর্বর হয় এবং ফলন বেশি পাওয়া যায় তবে সার ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই জমির গুণগতমান পরীক্ষা করে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার ব্যবহার করতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা:
- বর্ষার পানি ব্যবহার করুন।
- প্রয়োজনে সেচ প্রদান করুন।
- জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকার ব্যবস্থা করুন।
পোকামাকড় ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা:
- পোকামাকড় ও রোগবালাই দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
- জৈব পোকামাকড়নাশক ও রোগনাশক ব্যবহার করুন।
- প্রয়োজনে রাসায়নিক পোকামাকড়নাশক ও রোগনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
কাটা ও মাড়াই:
ধান পাকলে দ্রুত কেটে নিন। এতে করে ধান নষ্ট হবে না ঝরে পড়ার ভয় থাকবে না ।
আরো পড়ুন: গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা
ধান কেটে রোদে শুকিয়ে মাড়াই করুন। এবং ধান মাড়াই করে ভালোভাবে সংরক্ষণ করুন।
উৎপাদন বৃদ্ধির টিপস:
উন্নত চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করুন এবং আমাদের দেশে সরকারি মাধ্যমে বিভিন্ন কৃষি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে এগুলি থেকে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রাখুন।
রোপা আমন
রোপা আমন ধান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ধান উৎপাদন কাল। এটি বাংলাদেশের ৫০% ধান উৎপাদনের দায়িত্ব পালন করে। রোপা আমন ধানের মধ্যে বিভিন্ন জাতের ধান রয়েছে, যেমন বালাম, বৃহি, কালিজীরা, কাতারী, বাসমতি, পাটনী, কালোজীরা ইত্যাদি। রোপা আমন ধান বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত, যেমন রোপা আমন, রোপা আমনি, রোপা আমনী, রোপা আমনীকা, রোপা আমনীকালো, রোপা আমনীকালোজীরা ইত্যাদি।
রোপা আমন ধানের জন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএএআরআই) এর মধ্যে কয়েকটি উচ্চ উপজশীল ও হাইব্রিড ধান উদ্ভাবন করা হয়েছে। যেমন, রোপা আমন বিআরআরআই ধান ৯০, রোপা আমন বিআরআরআই ধান ৭৫, রোপা আমন বিআরআরআই ধান ৭৬, রোপা আমন বিএএআরআই ধান ১১, রোপা আমন বিএএআরআই ধান ১২, রোপা আমন বিএএআরআই ধান ১৩ ইত্যাদি।রুপা আমন ধান আষাঢ় মাসে বীজ বপন করে কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে কাটা হয়।
রুপা আমন ধানের বৈশিষ্ট্য:
জাত: উচ্চফলনশীল জাত (HYV)
বৃদ্ধির সময়: ১৪০-১৫০ দিন
গাছের উচ্চতা: ১০০-১১০ সেমি
শীষের ধরণ: লম্বা, ঘন
দানার রঙ: হালকা সোনালী
ফলন: ৫-৬ টন/হেক্টর
বোনা আমন:
বোনা আমন এটি আমন ধান যা ছিটিয়ে বোনা হয়। এটি আছড়া আমন নামেও পরিচিত। বোনা আমন ধান রোপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে চৈত্র-বৈশাখ মাস ধান কাটার সময় হচ্ছে অগ্রহায়ণ মাস বৈশিষ্ট্য মাস।
জাত: স্থানীয় জাত এবং উচ্চফলনশীল জাত (HYV) উভয়ই রয়েছে।
বৃদ্ধির সময়: ১৪০-১৫০ দিন
গাছের উচ্চতা: ৮০-১০০ সেমি
শীষের ধরণ: লম্বা, ঘন
দানার রঙ: বিভিন্ন জাতের জন্য বিভিন্ন রঙ হতে পারে
ফলন: ৪-৫ টন/হেক্টর
উপকারিতা:
বোনা আমন চাষ করতে তেমন বেশি খরচ হয় না।
এটি কম পানিতেও চাষ করা যায়।
বোনা আমন ধানের বিভিন্ন জাত রয়েছে যা বিভিন্ন পরিবেশে চাষ করা যায়।
সীমাবদ্ধতা:
বোনা আমনের ফলন রোপা আমনের তুলনায় কম।
বোনা আমন ধান বন্যার ঝুঁকিতে থাকে।
প্রিয় পাঠক পাটিকা আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়ে কৃষি জমি নির্বাচন এবং ধান চাষ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটি ধারণা পেয়েছেন।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url