মাছ চাষের পদ্ধতি - মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি
মাছ আমিষের চাহিদা পূরণ করে থাকে , আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় প্রাকৃতিকভাবে আমরা প্রচুর পরিমাণে মাছ পেয়ে থাকি। কিন্তু বর্তমান সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রাকৃতিক মাছ দিয়ে আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে না।
তাই বিভিন্ন পুকুর জলাশয়, ডভা, নালা এবং ধানি জমিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করব মাছ চাষের পদ্ধতি - মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি এবং মাছ চাষের খাবার পুকুর রোগ ও বিভিন্ন বিষয়ে তাই মাছ চাষের পদ্ধতি জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
মাছ চাষের পদ্ধতি - মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি
বর্তমান সময়ে পুকুর, বিল, চৌবাচ্চা, ধানের জমি, নালা এবং ডোভাতে মাছ চাষ করে সবাই লাভবান হতে যাচ্ছে। অনেকের মাছ চাষের পদ্ধতি দেখে অনেকে মাছ চাষ করা শুরু করছে দিয়ে লোকসান পোহাচ্ছে। আসলে মাছ চাষের পদ্ধতি আলাদা মাছ চাষ শুরু করতে হলে আপনাকে মাছ চাষের পদ্ধতি জানতে হবে। তার জন্য প্রথমে আপনাকে উপজেলা কিংবা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে এবং তাদের থেকে ভালো পরামর্শ নিতে হবে।
বাণিজ্যিকভাবে যেসব মাছ চাষিরা মাছ চাষ করে আসছে তাদের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে এবং তাদের থেকে মাছ চাষের পদ্ধতি জলাশয় মাছের খাবার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা নিতে হবে এবং তাদের পুকুর ও জলাশয় গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এছাড়াও অনলাইনের মাধ্যমে মৎস্য অধিদপ্তর মৎস্য চাষের পরামর্শ সমূহ নামের একটি মাছ চাষীদের জন্য পরামর্শমূলক ওয়েবসাইট খুলেছে যেখানে বিভিন্ন মাছ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে খাবার সম্পর্কে এবং জলাশয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা করা আছে।
মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করে ধীরে ধীরে মাছ চাষ করা শুরু করতে হবে। মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতির উপযুক্ত কয়েকটি দিক হচ্ছে পুকুর জলাশয় এবং খালে মাছ চাষ করা। শুরুর দিকে পুকুরে মাছ চাষ করাই সবথেকে লাভজনক বা উপযুক্ত কারণ পুকুরে বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করা যায়। যে ধরনের মাছগুলো একসঙ্গে চাষ করা যায় সে মাছগুলোকে নির্বাচন করে পুকুরে ছাড়তে হবে তার সঙ্গে কোন মাছ কোন খাদ্য খায় এবং কিভাবে খায় সেই অনুযায়ী খাবার দিতে হবে পুকুরের পানি পরিষ্কার রাখতে হবে আর লক্ষ্য রাখতে হবে পানিতে যেন পোকা না হয়।
আরো পড়ুন: অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা
মাছ চাষের জন্য কিছু নির্ধারিত জায়গা বা এলাকা থাকে ওই ধরনের এলাকার জলাশয়গুলোতে প্রাকৃতিকভাবে প্রচুর খাদ্য তৈরি হয় এমন জায়গা নির্ধারণ করতে হবে। নদী বা বিল এলাকাগুলো মাছ চাষের জন্য উপযোগী এলাকা এই এলাকাগুলোতে প্রাকৃতিক খাদ্য বেশি থাকে। মাছ চাষের জন্য উঁচু জায়গা নির্ধারণ করতে হবে যেন বর্ষার পানিতে পুকুর বা জলাশয় পানিতে ডুবে না যায়।
মাছ চাষের শুরুর দিকে কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ না করে এক প্রজাতির মাছ চাষ করলে ভাল হবে। কয়েক প্রজাতির মাছ চাষ করলে রুই, কাতলা, সিলভার কাপ, মৃগেল এবং প্রচলিত নাম বাটা মাছ এগুলো চাষ করা যাবে। মাছ চাষের পদ্ধতি - মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করুন মাছ চাষ করতে চাইলে।
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি
আমাদের দেশে মিঠা পানিতে ২৬০ টি প্রজাতিরও বেশি মাছ আছে তাছাড়া নদী বা লোনা পানির অঞ্চলে কয়েকশো প্রজাতির মাছ আছে। তবে পুকুর বা ডোবাতে চাষযোগ্য মাছগুলো হচ্ছে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ, সিলভারকার্প, মিররকার্প, গ্রাসকার্প, কমনকার্প, বিগহেড, রাজপুঁটি, নাইলোটিকা এবং বিদেশি মাগুর এই মাছগুলো একসঙ্গে পুকুরে চাষ করা যায়।
আরো পড়ুন: গাজরের উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের দেশ নদীমাতৃক আয় একসময় আমের চাহিদা প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হতো সে সময়ে আমাদের দেশের জনসংখ্যা অনেকটাই কম ছিল তবে বর্তমান সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্নভাবে মাছ চাষের পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পুকুর। বর্তমান সময়ে মাছ চাষিরা মাছ চাষের পদ্ধতি অবলম্বন করে ৬০ শতাংশ আমিষের চাহিদা পূরণ করছে।আর এই ৬০ শতাংশ আমিষের চাহিদা পূরণ হচ্ছে বিভিন্ন পুকুর ও ডোবা ধানি জমি থেকে মাছ চাষ করে।
বর্তমান সময়ে পুকুরে মাছ চাষ বেশি হয়ে থাকে আর পুকুরের মাছ চাষ তিন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে সনাতন পদ্ধতি, আধা নিবিড় ও নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ। পুকুর নির্বাচন এবং প্রস্তুতি সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে মাছ চাষের পদ্ধতি ও ভালো হয়।
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি যেভাবে করতে হবে।
- কচুরিপানা, কলমি, শ্যাওলা এবং জলজ আগাছা পুকুর থেকে তুলে ফেলতে হবে।
- শোল মাছ, মাগুর মাছ, টাকি মাছ, বোয়াল মাছ এবং রাক্ষসে জাতীয় মাছ তার সঙ্গে ছোট মাছ পুঁটি, চাঁদা, মেলা ইত্যাদি মাছগুলো পুকুর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
- পুকুরের পানি পরিষ্কার করতে হয় পুকুরে প্রতি এক শতকে এক কেজি জুন ব্যবহার করতে হবে। চুন পানিতে অনেকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে যেকোনো ড্রামে পানির সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা করে পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
- পুকুরে পোকা থাকলে কীটনাশক ব্যবহার করে পোকা মেরে ফেলতে হবে।
- মাটি এবং পানির গুনাগুন ঠিক রেখে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
- পুকুরের পাড় ও পুকুরের তলদেশ ঠিক রাখতে হবে।
- প্রতি এক শতাংশে গোবর সার ৫ থেকে ৭ কেজি ব্যবহার করতে হবে।
- প্রতি শতাংশে হাঁস মুরগির বিষ্ঠা ৫ থেকে ৬ কেজি।
- কম্পোস্ট সার ১০ থেকে ১২ কেজি ব্যবহার করা যাবে।
- প্রতি শতাংশে ইউরিয়া সার ১০০-১৫০ গ্রাম টিএসপি ৫০-৭৫ গ্রাম ব্যবহার করা যাবে।
- পুকুর খোলামেলা জায়গা এবং বসতবাড়ির আশেপাশে হতে হবে।
- দো-আঁশ ও এটেল মাটির পুকুর হলে বেশ ভালো হয়।
- পুকুরের আয়তন বড় হতে হবে যেন মাছ দৌড়াতে পারে।
- এর গভীরতা ৩ থেকে ৫ মিটারের মধ্যে হতে হবে।
- পুকুরে যেন সূর্যের আলো পড়ে পুকুরের পাড়ে কোন বড় গাছ বা ঝোপ থাকা যাবে না।
- পোনা মাছ ছাড়ার আগে পুকুর ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে।
- পোনা মাছ ছাড়ার আগে লক্ষ্য করতে হবে পোনা মাছে কোন রোগ অতিক্রম করেছে কিনা।
- সঠিক সংখ্যায় পুকুরে পোনা মাছ মজুদ করতে হবে।
মাছ চাষের উপযুক্ত সময়
বাংলা বছরের শেষ মাস চৈত্র এই মাসটি কৃষি কাজের জন্য উপযুক্ত সময়। দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব থাকায় অনেকেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পারছিলেন না। কিন্তু বর্তমান সময়ে করোনাভাইরাস এর প্রভাব কমে গেছে তাই এখন কোন ব্যবসা শুরু করতে কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে গরমের সময় গরমের সময় মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় প্রাকৃতিক খাবার প্রচুর পরিমাণে পেয়ে থাকে।
এছাড়াও বর্ষাকাল ও শীতকালে মাছ চাষ করা যায় তবে গরমের মত মাছের বৃদ্ধি হয় না তুলনামূলক একটু কম বৃদ্ধি হয়। কারণ বর্ষা ও শীতকালে মাছ চলাফেরা দৌড়াদৌড়ি একটু কম করে মাছ একটু কম খেতে পছন্দ করে তাই মাছের বৃদ্ধিটাও একটু কম হয়। মাছ চাষ করার শুরুতে মাছ চাষের জন্য পুকুর সুন্দরভাবে প্রস্তুত করতে হবে। একটি পুকুর সুন্দরভাবে প্রস্তুত করতে হলে কি কি করতে হবে তার সম্পর্কে উপরে আলোচনা করেছি।
গোবর দিয়ে মাছের খাদ্য তৈরি
মাছ চাষের পদ্ধতি, মাছ চাষ করতে গোবর ভালো নাকি খারাপ এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে পাঁচ বছর আগের মৎস্য বিভাগের কিছু পরামর্শ তুলে ধরতে হবে কারণ একসময় মৎস্য কর্মকর্তারাই পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি রাজহাঁস অথবা পাতি হাঁস পালন করার পরামর্শ দিতেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল মাছ চাষের পাশাপাশি রাজহাঁস চাষ করার জন্য মাছ বিভিন্ন জীবাণু ও ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বর্তমানে সরকার এই পদ্ধতি একেবারে নিষিদ্ধ করেছে। এখন থেকে তিন-চার বছর আগে আধুনিক।
পদ্ধতি ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাছ চাষ করা হতো না। যার কারণে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে মাছ মারা যেত, আর যার কারণ ছিল পুকুরে জৈব সার অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার করা নিয়ম অনুসারে জৈব সার না দেওয়ার কারণে এই সমস্যাগুলো হত। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে কি গোবর পুকুরে ব্যবহার করা যাবে না উত্তর হচ্ছে যাবে, মাছ চাষের পদ্ধতি গোবর সার ব্যবহার করা যায় তবে কিছু নিয়ম অনুসারে ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমে গোবরের সঙ্গে খৈল ও সামান্য পরিমাণ ইউরিয়া টিএসপি সার মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন রেখে দিতে হবে তারপরে গোবর সার ভালোভাবে মিশ্রণ করে ২৪ ঘন্টা ফাঁকা জায়গাতে সূর্যের আলো যেন পড়ে এবং গ্যাস যেন বের হয়ে যায় এরকম জায়গাতে রাখতে হবে। এরপরে ১ শতকে ১৫ কেজি মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে এটি শুধু কাত জাতীয় মাছের জন্য তবে শীত ও বর্ষাকালে এ জৈব সার না ব্যবহার করায় ভালো। পাবদ, গুলশা, শিং, মাগুর ও কই মাছ চাষে এই জৈব সার ব্যবহার করা যাবে না।
পুকুরে আমরা গোবর ব্যবহার করি প্রাকৃতিক খাবার তৈরির জন্য, কিন্তু প্রাকৃতিক খাবার তৈরির জন্য পুকুরে আমরা গোবর না ব্যবহার করে সরিষার খৈল, আটা অটোব্রান, চিড়া এবং রাসায়নিক সার ইউরিয়া টিএসপি ব্যবহার করতে পারি। এই নিয়মে মাছ চাষের পদ্ধতি অবলম্বন করলে আমরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন থেকে রক্ষা পাবো।
কম খরচে মাছ চাষ
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ মাছের চাহিদা অনেক বেশ, বাংলাদেশে ২৬০ টি প্রজাতির মাছ চাষ হয়ে থাকে তার মধ্যে কিছু মাছ আছে যেগুলো কম খরচে একসঙ্গে একই জায়গাতে এবং অল্প জায়গাতে চাষ করা যায় রুই কাতলা সিলভার-কাপ ইত্যাদির বিভিন্ন মাছ আছে যেগুলো একসঙ্গে অল্প জায়গাতে চাষ করা যায়। শুধু এক জায়গাতে অনেক প্রজাতির মাছ চাষ করলে যে লাভবান হওয়া যাবে তা কিন্তু নয়।
- মাছের খাবারের চাহিদা কমিয়ে লাভবান হওয়া যায়।
- অল্প জায়গায় অধিক পরিমাণে মাছ চাষ করে লাভবান হওয়া যায়।
- দ্রুত বৃদ্ধির মাছ চাষ করে লাভ করা যায়।
- লাভজনক মাছের জাত চিনলে এবং দ্রুত বর্ধনশীল করলে লাভ করা যায়।
- মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তারির পদ্ধতি জানলে স্বল্প খরচে মাছ চাষ করা যায়।
- সঠিক পরিচর্যা ও সতর্কতা অবলম্বন করলে স্বল্প খরচে লাভবান হওয়া যায়।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আর্টিকেলটি পড়ে নিশ্চয়ই আপনি মাছ চাষের পদ্ধতি - মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে সুন্দরভাবে জানতে পেরেছেন। আমরা চেষ্টা করেছি মাছ চাষের পদ্ধতি - মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি এবং মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি ও বিভিন্ন বিষয়ে।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url