বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশর তালিকা ২০২৩

এই তালিকাটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) কর্তৃক প্রদত্ত ২০২৩ সালের অনুমানিত মাথাপিছু জিডিপির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা সঠিক তথ্যের মাধ্যমে আমাদের আর্টিকেলটিতে প্রকাশ করেছি শের গরিব দেশের তালিকা এবং তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। বিশ্বের গরীব দেশের তালিকা এবং দেশগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশর ২০২৩ তালিকা

মাথাপিছু জিডিপি একটি দেশের মোট উৎপাদনকে (জিডিপি) তার জনসংখ্যার দ্বারা ভাগ করে বের করা হয়। এটি একটি দেশের গড় আয়ের একটি পরিমাপ। মাথাপিছু জিডিপি একটি দেশের সম্পদের বৈষম্যকে পরিমাপ করে না। দারিদ্র্যের অন্যান্য অনেক পরিমাপ রয়েছে, যেমন জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ। 

বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশর  তালিকা ২০২৩

বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশের তালিকা বানানোর জন্য বিভিন্ন মাপকাঠি ব্যবহার করা হয়, যেমন মাথাপিছু জিডিপি, মানব বিকাশ সূচক, গরিবতা রেখা, ক্ষমতা ক্রয়শীলতা ইত্যাদি। একটি সাধারণ মানদণ্ড হলো পিপিপি (ক্রয়শক্তি সমতুল্যতা) ডলারে মাথাপিছু জিডিপি, যা একটি দেশের অর্থনৈতিক উপলব্ধি ও জীবনমানের একটি প্রাথমিক প্রতিফলন দেয়।

  • বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশ ২০২৩ তালিকা মাথাপিছু জিডিপি অনুযায়ী উল্লেখ করা হয়েছে
  • বুরুন্ডি: মাথাপিছু জিডিপি: $271 (২০২৩ সালের আইএমএফ অনুমান)
  • দক্ষিণ সুদান: মাথাপিছু জিডিপি: $282
  • সোমালিয়া: মাথাপিছু জিডিপি: $594
  • সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক: মাথাপিছু জিডিপি: $625
  • নাইজেরিয়া: মাথাপিছু জিডিপি: $638
  • মালাউই: মাথাপিছু জিডিপি: $641
  • লাইবেরিয়া: মাথাপিছু জিডিপি: $698
  • সিয়েরা লিওন: মাথাপিছু জিডিপি: $718
  • চাদ: মাথাপিছু জিডিপি: $762
  • গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র: মাথাপিছু জিডিপি: $824

বুরুন্ডি

বুরুন্ডি হলো আফ্রিকার একটি দেশ, যা আফ্রিকার মহাদেশে অবস্থিত। এর রাজধানী হলো বুজুম্বুরা। বুরুন্ডির মানুষের প্রাথমিক ভাষা হলো রুন্ডি, এবং সার্বজনীন ভাষা হিসেবে সোয়াহিলি ভাষা ব্যবহার করা হয়। বুরুন্ডি একটি দরিদ্র দেশ, যেখানে অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন থাকে।
বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশর  তালিকা ২০২৩
  • অবস্থান: পূর্ব-মধ্য আফ্রিকা
  • জনসংখ্যা: ১ কোটি ১.২ মিলিয়ন (২০২৩)
  • ধর্ম: খ্রিস্টান (৬৭%), মুসলিম (২৪%), অন্যান্য (৯%)

অর্থনীতি: কৃষিভিত্তিক (কফি, চা), খনিজ সম্পদ নিকেল, সোনার নির্ভরশীল দেশ। শাসনকালে দেশটিকে শাসন করেছে জার্মান উপনিবেশ (১৮৯০-১৯১৬), বেলজিয়ান উপনিবেশ (১৯১৬-১৯৬২), স্বাধীনতা (১৯৬২), গৃহযুদ্ধ (১৯৯৩-২০০৫) বর্তমান পরিস্থিতে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা একটি দেশ বুরুন্ডি এই দেশে প্রায় সময় গৃহযুদ্ধ লেগে থাকে।

দক্ষিণ সুদান

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে একটি শান্তি চুক্তির মাধ্যমে। নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, তবে এটি এখনও দুর্বল এবং বিভক্ত। দুর্নীতি এবং সহিংসতা রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে বিদ্যমান।

আরো পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে গরিব দেশ বুরুন্ডি

অর্থনৈতিক অবস্থায় দক্ষিণ সুদান তেল নির্ভরশীল একটি দেশ দেশটিতে তেল ছাড়াও নির্ভরশীল তবে বর্তমান সময়ে পানির সংকট থাকায় ফসল থলাতে পারছে না দেশটি। তেলের দাম কমে যাওয়ার ফলে অর্থনীতিতে শংকর দেখা দিয়েছে। দেশটিতে দারিদ্র্য এবং খাদ্য সংকট ব্যাপকভাবে বিদ্যমান।

বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশর  তালিকা ২০২৩

দীর্ঘদিনের যুদ্ধের ফলে দেশটিতে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।খাদ্য, জল এবং স্বাস্থ্যসেবার অভাব রয়েছে দেশটিতে।

দক্ষিণ সুদানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ শান্তি চুক্তি টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।দেশটির উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন। দক্ষিণ সুদানের বর্তমান অবস্থা জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং। দেশটির উন্নয়নের জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং ভাল নীতিশাস্ত্রের প্রয়োজন।

সোমালিয়া

সোমালিয়া হল উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ, যার রাজধানী মোগাদিশু। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে বিস্তৃত তটরেখা রয়েছে। এই দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী সোমালী হয়, যারা সোমালি ও আরবি ভাষায় কথা বলে। সোমালিয়ার ইতিহাস খুব ধনী ও বৈচিত্র্যময়। এটি পুরাতন পুন্ত রাজ্যের সম্ভাব্য স্থান ছিল। মধ্যযুগে এখানে কয়েকটি শক্তিশালী সোমালী সলতনত ছিল।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইতালী এই অঞ্চলকে দখল করে ফেলে। এরপর এই দেশ বিভিন্ন যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, ক্ষুধা, জলদস্যুতা ও জঙ্গি আক্রমণের শিকার হয়েছে। বর্তমানে এই দেশে একটি পরিবর্তনকালীন সরকার রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় শান্তি ও স্থিতিস্থাপনার চেষ্টা করছে।

রাজনৈতিক তথ্য:

  • সোমালিয়া একটি ক্ষণস্থায়ী সরকার দ্বারা পরিচালিত।
  • দেশটি দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধে ভুগছে।
  • সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংসতা একটি বড় সমস্যা।

অর্থনৈতিক তথ্য:

  • সোমালিয়া বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলির মধ্যে একটি।
  • দেশটির অর্থনীতি কৃষি এবং পশুপালনের উপর নির্ভরশীল।
  • খরা এবং দুর্ভিক্ষ একটি বড় সমস্যা।

মানবিক তথ্য:

  • সোমালিয়াতে মানবিক সংকট বিদ্যমান।
  • লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্য এবং জলের অভাবে ভুগছে।
  • স্বাস্থ্যসেবার মান নিম্ন।

সামাজিক তথ্য:

  • সোমালিয়াতে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তেজনা বিদ্যমান।
  • ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি এবং আধুনিকতার মধ্যে সংঘাত রয়েছে।
  • দেশটিতে শিক্ষার মান নিম্ন।

সেন্ট্রাল আফ্রিকান

সেন্ট্রাল আফ্রিকান মানুষের জীবন যাপন তাদের ভৌগলিক অবস্থান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক-অর্থনীতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক বিশ্বের সবচেয়ে গরিব দেশগুলির মধ্যে একটি হিসেবে পরিচিত। এই দেশের বাসিন্দারা মূলত কৃষিজীবী এবং তারা প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি অনেক সময় সংঘর্ষ এবং অস্থিরতার কারণে প্রভাবিত হয়। এই দেশের বাসিন্দারা মূলত ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সংস্কার এবং উৎসব মাধ্যমে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বজায় রাখেন।

দেশটির ভৌগোলিক বৈচিত্র্য অনেকটাই আলাদা। মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ভূগোল, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি ভিন্ন, তাই তাদের জীবনযাত্রার ধরণও ভিন্ন। অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে ছোট আকারের জীবিকা নির্বাহের কৃষি। সৃষ্টির প্রধান খাদ্য তালিকাতে মধ্যে রয়েছে  ক্যাসাভা, ভুট্টা, এবং চাল এ খাদ্যগুলোর উপর নির্ভরশীল দেশটির বেশিরভাগ মানুষ। কিছু লোক পশুপালন করে, তবে গবাদি পশু রোগের কারণে এটি সীমিত।

শিক্ষা:

শিক্ষার হার কম, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য।

স্বাস্থ্যসেবা:

স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো দুর্বল, এবং অনেক মানুষ ম্যালেরিয়া, এইচআইভি/এইডস, এবং যক্ষ্মার মতো রোগে আক্রান্ত। জীবনযাত্রার মান নিম্ন, এবং অনেক মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।

নাইজেরিয়া

নাইজেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি বৃহত্তম ও জনবহুল রাষ্ট্র। এর রাজধানী হল আবুজা, কিন্তু এর বৃহত্তম নগরী হল লেগোস। এর সরকারি ভাষা হল ইংরেজি, কিন্তু এর পাশাপাশি অন্যান্য অনেকগুলি ভাষা ব্যবহৃত হয়। এর সরকার হল কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্র, যেখানে রাষ্ট্রপতি হল মুহাম্মাদু বুহারি। এর আয়তন হল ৯,২৩,৭৬৮ বর্গকিলোমিটার এবং এর জনসংখ্যা হল ১৮,৮৪,৬৩,৬৪০ (২০১৫ অনুমান)।

নাইজেরিয়া একটি ভৌগোলিকভাবে বৈচিত্র্যময় দেশ। এর উপকূলীয় অঞ্চল হল উপহ্রদ ও জলাভূমি, এর মধ্যভাগ হল মালভূমি ও নিম্নভূমি, এর উত্তর হল সাভানা ও অর্ধ-ঊষর সমভূমি। এর জলবায়ু হল উষ্ণ, যেখানে বর্ষাকাল ও শুষ্ক ঋতু আছে। এর দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগর ও গিনি উপসাগর আছে। এর পূর্বে ক্যামেরুন, উত্তরে নাইজার ও চাদ, পশ্চিমে বেনিন এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে চাদ হ্রদ আছে।

নাইজেরিয়া একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ। এর ইতিহাসে অনেকগুলি প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সভ্যতা ও রাজ্য উত্থিত হয়েছে, যেমন নোক, ইফে, বেনিন, কানেম-বর্নু, হাউসা, ইয়োরুবা, ইগবো ইত্যাদি। এর সাংস্কৃতিতে অনেকগুলি ধর্ম, ভাষা, শিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য, রণনীতি, খেলা ও উৎসবের প্রভাব দেখা যায়।

মালাউই

মালাউই হল আফ্রিকার একটি দেশ, যা মজুম্বিক চ্যানেলের পাশে অবস্থিত। মালাউইর রাজধানী হল লিলঙ্গোয়ে, যা দেশের সবচেয়ে বড় শহর। মালাউইর রাষ্ট্রপতি হল লাজারুস চাকোয়েরা, যিনি ২০২০ সালে নির্বাচিত হন। মালাউইর প্রধান ভাষা হল চিচেওয়া, যা দেশের আধিকাংশ লোক বলে। মালাউইর মুদ্রা হল কোয়াচা, যা একটি প্রকার মাখনফুলের নাম। 1

মালাউইর ইতিহাস হল বিস্ময়কর ও বৈচিত্র্যময়। মালাউইর প্রাচীন নাম হল নায়াসাল্যান্ড, যা দেশের বৃহত্তম হ্রদ নায়াসার থেকে নেওয়া হয়েছে। মালাউই দেশটি বিভিন্ন শক্তিশালী রাজ্যের অধীনে ছিল, যেমন মালাউই সাম্রাজ্য, যাকুবা সাম্রাজ্য, নগনগা সাম্রাজ্য ইত্যাদি। মালাউই পরবর্তীতে পর্তুগিজ, ব্রিটিশ, ফ্রেঞ্চ ও জার্মান শাসকদের কবলে পড়ে। মালাউই ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে।

মালাউইর ভূগোল হল পাহাড়, উপত্যকা ও হ্রদের মিশ্রণ। মালাউইর প্রায় ২০% অংশ নায়াসা হ্রদ দ্বারা ঢাকা। মালাউইর সর্বোচ্চ বিন্দু হল মুলাঞ্জে পাহাড়, যার উচ্চতা ৩,০০২ মিটার। মালাউইর জলবায়ু হল উষ্ণ ও আর্দ্র। মালাউইর প্রাকৃতিক সম্পদ হল তুলা, চা, তামাক, চিনি, কাঠ, মাছ, পাথরকোয়লা, উরণিয়াম ইত্যাদি।

মালাউইর অর্থনীতি হল মূলত কৃষি-নির্ভর। মালাউইর প্রায় ৮০% লোক কৃষিকাজে নিযুক্ত। মালাউইর প্রধান রপ্তানি দ্রব্য হল তুলা, যা দেশের ৬০% রপ্তানি আয়ের উৎস। মালাউইর অন্যান্য রপ্তানি দ্রব্য হল চা, চিনি, কাজুবাদাম, কফি, পান পাতা ইত্যাদি। মালাউইর প্রধান আমদানি দ্রব্য হল খাদ্য, পেট্রোলিয়াম, বস্ত্র, যানবাহন, মেশিন ইত্যাদি। মালাউইর প্রধান বাণিজ্য সঙ্গী দেশ হল চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, জার্মানি, মোজাম্বিক, জিম্বাবুয়ে, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মালাউইর সংস্কৃতি হল বিভিন্ন জাতীয় ও আধিবাসী গোষ্ঠীর মিশ্রণ। মালাউইর প্রায় ৯০% লোক হল ক্রিশ্চান, বাকি হল মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। মালাউইর লোকজন হল সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ, উদার ও সহযোগী।

লাইবেরিয়া

লাইবেরিয়া পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ যা আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত। এর রাজধানী মনরোভিয়া। এর সরকারি ভাষা ইংরেজি। এর জাতীয়তাসূচক বিশেষণ লাইবেরিয়ান। এর মুদ্রা লাইবেরিয়ান ডলার। এর জনসংখ্যা ২০২১ অনুযায়ী লাইবেরিয়ার মোট জনসংখ্যা 5.193 মিলিয়ন প্রায়।

লাইবেরিয়ার ইতিহাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ দাসেরা এবং মুক্ত কৃষ্ণাঙ্গ দাসেরা এই দেশে আসার সাথে শুরু হয়। তারা আমেরিকান কলোনাইজেশন সোসাইটির সহায়তায় এই দেশে বসবাস করেন। তারা ২৬শে জুলাই ১৮৪৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। লাইবেরিয়া হল আফ্রিকার প্রথম ও পুরাতনতম স্বাধীন রাষ্ট্র।

লাইবেরিয়ার ভূগোল পাহাড়, উপত্যকা, বন, নদী ও সমুদ্রের দ্বারা বর্ণিত। এর আয়তন ১,১১,৩৬৯ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে সিয়েরা লিওন ও গিনি, পূর্বে কোত দিভোয়ার, এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। এর জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র। এর প্রাণী ও উদ্ভিদ বিভিন্ন ও বৈচিত্র্যময়।

লাইবেরিয়ার রাজনীতি প্রজাতন্ত্রের মাধ্যমে চলে। এর সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনমতে নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতির নিচে মন্ত্রিপরিষদ ও বিধায়ক সভা রয়েছে। বিধায়ক সভা দুই সদস্যবৃন্দ থেকে গঠিত। একটি হল সেনেট এবং অন্যটি হল প্রতিনিধি সভা। লাইবেরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপতি হল এলেন জনসন সারলিফ।

লাইবেরিয়ার অর্থনীতি মূলত কৃষি, খনি, ও পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। এর প্রধান রপ্তানী পণ্য হল রাবার, কফি, কোকো, ডায়ামন্ড, ও লোহা। এর প্রধান আমদানী পণ্য হল খাদ্য, পেট্রোলিয়াম, মেশিনারি, ও ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কিত পণ্য। এর প্রধান বাণিজ্য সঙ্গী হল চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ও আফ্রিকান ইউনিয়ন।

লাইবেরিয়ার সংস্কৃতি ও সমাজ বিভিন্ন জাতি, ভাষা, ধর্ম, ও ঐতিহ্যের মিশ্রণ। এর প্রায় ১৬টি ভিন্ন ভিন্ন জাতি রয়েছে। এর প্রায় ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষা রয়েছে। এর প্রায় ৮৫% লোক খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী এবং ১২% লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী। এর বাকি লোক প্রাচীন আফ্রিকান ধর্ম অনুসরণ করে।

সিয়েরা লিওন

সিয়েরা লিওন একটি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ, যা গিনি, লাইবেরিয়া এবং অতলান্তিক মহাসাগরের সাথে সীমান্ত বাঁধা রাখে। দেশটির রাজধানী ফ্রিটাউন, যা একটি বৃহত্তম বন্দর শহর। দেশটির প্রায় ৭৮ লাখ মানুষ বসবাস করে, যার মধ্যে বেশিরভাগ মুসলিম। দেশটির রাষ্ট্রীয় ভাষা ইংরেজি, তবে ক্রিও, মেন্ডে, টেমনে এবং লিম্বা এমন কিছু স্থানীয় ভাষা ব্যবহৃত হয়।

সিয়েরা লিওনের ইতিহাস দীর্ঘ এবং বিচিত্র। দেশটি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন আফ্রিকান জনগোষ্ঠীর বাসস্থান ছিল। ১৫শ শতাব্দী থেকে পর্তুগিজ, ব্রিটিশ, ফরাসি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলি দেশটির সাথে বাণিজ্য ও রাজনৈতিক যোগাযোগ করে আসে। দেশটি একটি গুলাম বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিল। ১৭৮৭ সালে ব্রিটিশ রাজত্ব দেশটিতে প্রথম কালো উদ্ভাসনকারীদের বসতি স্থাপন করে। এরপর দেশটি ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে পরিচালিত হয়।

১৯৬১ সালে সিয়েরা লিওন স্বাধীনতা অর্জন করে। তবে দেশটি বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকট, গৃহযুদ্ধ, কুপ্রতিক্রিয়া এবং ইবোলা মহামারীর শিকার হয়। বর্তমানে দেশটি পুনর্নির্মাণের পথে এগিয়ে চলেছে।সিয়েরা লিওন একটি প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ দেশ। দেশটির প্রায় ৭১% জমি বনাচ্ছন্ন। দেশটির প্রধান কৃষি উৎপাদন চাল, কফি, কাকাও, তেলবীজ, কাজু বাদাম এবং পাম তেল।

দেশটি হীরক, রূপা, বৌক্সাইট, টাইটানিয়াম, ক্রোমাইট এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদের উৎস। দেশটির মৎস্য ও শ্রিম্প উৎপাদন ও রপ্তানি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্র। দেশটির পর্যটন শিল্প এখনো অপরিক্ষিত, তবে দেশটির সুন্দর সমুদ্র সৈকত, বনভূমি, জীববৈচিত্র্য এবং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক আকর্ষণ পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে।

সিয়েরা লিওন বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রাখে। বাংলাদেশ সিয়েরা লিওনের শান্তি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধের সময় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে অংশ নিয়ে শান্তি স্থাপনে সহায়তা করেছে।

চাদ

চাদ হল মধ্য আফ্রিকার একটি দেশ, যা সূর্যের উপরিভাগের কার্কট রেখার উত্তরে অবস্থিত। চাদের উত্তরে লিবিয়া, পূর্বে সুদান, দক্ষিণে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়া, এবং পশ্চিমে নাইজার দেশগুলি সীমান্ত বাঁধায়। চাদের রাজধানী হল নজামেনা, যা চাদ নদীর তীরে অবস্থিত।চাদের আয়তন হল ১,২৮৪,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪৯৫,৭৫৯ বর্গমাইল), যা আফ্রিকার পঞ্চম বৃহত্তম দেশ।

চাদের জনসংখ্যা হল ১৬.৪২ কোটি (২০২০ সালের অনুমান), যা আফ্রিকার ২১তম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। চাদের প্রধান ভাষা হল ফরাসি ও আরবি, এবং এর প্রধান ধর্ম হল ইসলাম ও খ্রীষ্টান। চাদের প্রাকৃতিক সম্পদ হল সোনা, ইউরেনিয়াম, তেল, চা, গম, তিল, সরিষা, মিষ্টি আলু ইত্যাদি। চাদের অর্থনীতি মূলত কৃষি ও পশুপালনের উপর নির্ভরশীল, যার মধ্যে ৮০% লোক নিয়োজিত। চাদের মুদ্রার নাম হল চাদ ফ্র্যাঙ্ক।

চাদের ইতিহাস হল বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি, রাজ্য ও সাম্রাজ্যের ইতিহাস। চাদের প্রাচীনতম মানব সভ্যতার ছাপ পাওয়া গেছে ৭ লাখ বছর আগের। চাদের নাম হয়তো চাদ হ্রদের থেকে এসেছে, যা আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম হ্রদ। চাদের উত্তরাঞ্চলে বর্ণাঢ্য মরুভূমি রয়েছে, যা সাহারা নামে পরিচিত। চাদের মধ্যাঞ্চলে সাবানা ও পাহাড় রয়েছে, যা সাহেল নামে পরিচিত। চাদের দক্ষিণাঞ্চলে বন ও জলাভূমি রয়েছে, যা সুদানী অঞ্চল নামে পরিচিত।

চাদের ইতিহাসে বিভিন্ন সভ্যতা ও রাজ্য উদয় ও পতন করেছে, যেমন কানেম-বর্নু সাম্রাজ্য, ওয়াদাই সাম্রাজ্য, বাগির্মি সাম্রাজ্য, কোতোকো সাম্রাজ্য, ওয়াদাই সাম্রাজ্য, দারফুর সাম্রাজ্য ইত্যাদি। চাদের আধুনিক রাষ্ট্রতন্ত্র গঠিত হয় ১৯৬০ সালে, যখন এটি ফরাসি শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। তবে চাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা স্থির না হয়ে বিভিন্ন সংঘর্ষ, বিদ্রোহ, গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের শিকার হয়েছে। বর্তমানে চাদের রাষ্ট্রপতি হল ইদ্রিস দেবি, যিনি ২০০৬ সাল থেকে এই পদে আছেন।

কঙ্গো প্রজাতন্ত্র

কঙ্গো প্রজাতন্ত্র হল মধ্য আফ্রিকার একটি দেশ, যা কঙ্গো নদীর উত্তর পাশে অবস্থিত। এর রাজধানী হল ব্রাজাভিল, যা কঙ্গো নদীর তীরে অবস্থিত। এর পূর্বে এটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল, এবং ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা লাভ করে। এর পর এটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিল, কিন্তু ১৯৯২ সালে বহুদলীয় নির্বাচন হয়। এটি আফ্রিকান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, লা ফ্রাঙ্কোফোনি এবং মধ্য আফ্রিকান রাজ্যগুলোর অর্থনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্য। এটি আফ্রিকার চতুর্থ বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ।

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের আয়তন হল ৩,৪২,০০০ বর্গ কিলোমিটার, এবং জনসংখ্যা হল ৪.৬ কোটি (২০১৪ অনুমান)। এর সরকারি ভাষা হল ফরাসি, এবং আঞ্চলিক ভাষা হল কিতুবা এবং লিঙ্গালা। এর জাতীয় মুদ্রা হল মধ্য আফ্রিকান সিএফএ ফ্রাঙ্ক। এর রাষ্ট্রপতি হল ডেনিস সাসও এনগুয়েসো, যিনি ১৯৭৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। 

কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের ভূগোল হল মুখ্যত পাহাড় ও উপত্যকা, যা কঙ্গো নদীর বাঁকে অবস্থিত। এর উত্তরে হল ব্রাজাভিল বনভূমি, যা বিশাল একটি বর্ষাবন হিসেবে পরিচিত। এর দক্ষিণে হল নিয়ারি বনভূমি, যা একটি শুষ্ক ও উষ্ণ অঞ্চল। এর পূর্বে হল কঙ্গো বনভূমি, যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনভূমি। এর পশ্চিমে হল আটলান্টিক মহাসাগর, যা এর সাথে ১৭০ কিলোমিটার সীমান্ত তৈরি করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url