কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলা একটি বারোমাসি ফল বছরের যে কোন সময় এ ফল পাওয়া যায় তাই এই ফলের খাবার চাহিদাটা অনেক বেশি। কলা প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুণে ভরপুর। কলার উপকারিতা অনেক কলাতে অরুচি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কলা সকলের পছন্দ করে এবং কলার উপকারিতা অনেক। অনেকেই কলা সকালের নাস্তাই খেয়ে থাকে আবার অনেকে ক্লান্তি শরীরে খিদে মেটাতে খেয়ে থাকে।
তবে কলার উপকারিতা যেমন আছে। তেমন কলার অপকারিতা আছে। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা আজকে আমরা আলোচনা করব কলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে এবং খালি পেটে কলা খেলে কি হয় তা সম্পর্কে জানব কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
শরীরে ক্যালোরি চাহিদা মিটিয়ে থাকে কলা, কলায় ক্যালরির পরিমাণ থাকে ১০০। এছাড়াও কলায় প্রচুর উপাদান আছে যেমন ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আন্টি-অক্সিডেন্ট যেগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের অনেকেরই সকালের নাস্তার সঙ্গে কলা খাওয়ার অভ্যাস থাকে আবার অনেকে বিভিন্ন সময় কলা খায় তবে বিশেষজ্ঞদের মতে সকালে কলা খেলে শরীরের মেটাবলিজম ও এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে কলা খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি পায় তবে সকালে শুধু কলা খাওয়া যাবেনা কলার সঙ্গে টোস্ট, ডিম, পাউরুটি এই খাবারগুলো রাখতে হবে। কলা বারো মাস পাওয়া যায় কারণ কলা বারো মাস উৎপন্ন হয় পৃথিবীর চতুর্থ অর্থকারী ফল হচ্ছে কলা। কলা পৃথিবীর ১০ টি দেশে উৎপন্ন হয়ে থাকে অন্য যে কোন ফলের তুলনায় খাবার তালিকাতে কলা বেশি রাখা হয়। কলার উপকারিতা অনেক গলায় বিভিন্ন ভিটামিন এ ফোর ফোর তাই কলাকে বলা হয় প্রাকৃতিক মাল্টিভিটামিন। কলার উপকারিতা গুলো হচ্ছে।
- ক্যালসিয়াম।
- ম্যাগনেসিয়াম।
- জিংক।
- ভিটামিন-এ।
- ভিটামিন-সি।
- ভিটামিন-বি।
- প্রোটিন।
- আয়রন।
- ক্যালোরি।
- খনিজ পদার্থ।
- ফাইবার।
- মিনারেল।
- পটাশিয়াম।
কলার উপকারিতা অনেক, কলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে কলায় আছে বিশেষ গুনাগুন।এতক্ষণ আমরা জানলাম কলার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এখন জানব প্রতিদিন খাবার তালিকাতে কলা রাখলে আমাদের শরীরের কি কি উপকারিতা হয় চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কলার উপকারিতা সম্পর্কে।
- একটি কলায় আছে পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- কলায় আছে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের হাড় শক্ত করে থাকে। এবং হাড় ক্ষয়রোধ থেকে মুক্তি দেয়।
- কলায় আছে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি দেয়। নিয়মিত কলা খাদ্য তালিকায় রাখলে খাবার হজম হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- কলা একটি মিষ্টি ফল হলেও শরীরের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কলায় পটাশিয়াম এর মাত্রা বেশি থাকলেও নুন একেবারে কম তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কলা বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- হজম শক্তি বাড়াতে কলা ব্যাপক ভূমিকা রাখে। কলার ভিতরে আছে ফাইবার যা পেট পরিষ্কার রাখতে এবং দ্রুত খাবার হজম করতে সাহায্য করে।
- শরীরের এনার্জি শক্তি বাড়াতে কলা সাহায্য করে থাকে যারা প্রচুর পরিশ্রম করেন এবং নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলা করেন তাদের খেলাধুলা ও ব্যায়াম এরপরে একটি করে কলা খাওয়া উচিত। কলায় আছে প্রচুর এনার্জি শক্তি যা আপনার শরীরের ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।
- অনেকেই মনে করে কলা খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। কিন্তু আসলে নিয়মিত কলা খেলে ওজন বাড়ে না ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কলাতে বিভিন্ন উপাদান আছে যার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরের পানির চাহিদা ও হিমোগ্লোবিন উপাদানে কলা বিশেষ ভূমিকা রাখে তাই প্রতিদিন খাদ্য তালিকাতে কলা রাখা উচিত।
- কলায় আছে পটাশিয়াম যা মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন কলা খেলে মনোযোগ শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- ত্বক উজ্জ্বল ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়ে থাকেন নিয়মিত কলা খেলে মেস্তা ব্রণ এবং মশার কামড়ের চিহ্ন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় নিয়মিত কলা খেলে।
- কলা খেলে আরো বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি মিলে যেমন আলসার ও শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার থেকেও মুক্তি মিলে নিয়মিত খেলে।
কলার অপকারিতা
সকালে যে কোন কাজে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়া সবারই অভ্যাস। আর এই অভ্যাসের কারণেই আমরা সকালের নাস্তাটা ঠিক মতো কেউ করতে পারি না। তাই তাড়াহুড়ো করে খাবার টেবিল থেকে একটি কলা নিয়ে খেয়ে ফেলি আবার কেউ দোকান থেকে কিনে খাই কিন্তু আসলে খালি পেটে কলা খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে থাকে চলুন তাহলে কলার অপকারিতা গুলো কি জেনে নি।
- কলা একটি মিষ্টি জাতীয় ফল কলা খাওয়ার পরে দাঁত ভালো করে পরিষ্কার না করলে দাঁতের ক্ষয় রোগটি দেখা যায়। তাই অবশ্যই কলা খাওয়ার পরে দাঁত কে পরিষ্কার রাখতে হবে।
- এলার্জি রোগটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। একেকটি মানুষের এক এক কারণে এলার্জি রোগ হয়। অথবা ভিন্ন ভিন্ন খাবারে এলার্জি হয়ে থাকে। তাই আপনার যদি কলাতে এলার্জি থাকে তাহলে কলা খাওয়া বন্ধ করুন অথবা কলা খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
- কলাতে প্রচুর ভিটামিন-বি আছে যার ফলে অতিরিক্ত কলা খেলে নার্ভের ক্ষতি হয় তাই কলা খাবার পরিমাণটা সীমিত পর্যায়ে রাখুন।
- যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে তাদের কলা খাওয়া কমিয়ে দেওয়া উচিত অথবা সপ্তাহে তিন দিন কলা খেলে শ্বাসকষ্টের কোন সমস্যা হয় না তবে অবশ্যই দিনে একটি বেশি না।
- কলায় আছে শর্করা, অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে শরীরের শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায় যার কারণে পেট ব্যথা হতে পারে।
- কলা একটি মিষ্টি জাতীয় ফল এমনকি কলাতে সুগার আছে তাই কলা অতিরিক্ত খেলে ডায়াবেটিস এর মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরকে কলা কম পরিমাণে খেতে হবে।
- মাইগ্রেন সমস্যা যাদের আছে তাদের কলা না খাওয়াই উচিত। কলাতে টাইরামাইল নামের একটি উপাদান আছে যেটি মাইগ্রেনের সমস্যা করে থাকে।
- এছাড়াও অতিরিক্ত কলা খেলে গ্যাস হতে পারে গলা ব্যথা ঠান্ডা লাগা বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই অবশ্যই কলা খেলে তার সীমিতভাবে খেতে হবে।
খালি পেটে কলা খেলে কি হয়
অনেকেই ওজন নিয়ন্ত্রণে অথবা অফিস ও ক্লাসের কারণে তাড়াহুড়ো করে সকালের নাস্তা টা কলা দিয়েই সেরে ফেলে। কলাতে আছে ফাইবার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো পুষ্টিকর উপাদান। কলার মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-বি৬ এগুলো পেশি গঠনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখে। সকালে খালি পেটে কলা খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা, শরীরে তাড়াতাড়ি ক্লান্তি ও ঘুম চলে আসা এবং এলার্জি ও পেট ব্যথা এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। তাছাড়াও যাদের ডায়াবেটিস এর সমস্যা আছে তাদের খালি পেটে কলা খেলে ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই খালি পেটে কলা খাওয়ার পরিবর্তে কলার সঙ্গে কিছু একটা খেলে খুব উপকারে আসে যেমন পাউরুটি, টস্ট, ডিম ও পরাটা এগুলো দিয়ে কলা খেতে পারেন তাহলে কোন সমস্যা হবে না।
কলা বিভিন্ন পুষ্টিতে ভরপুর শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে থাকে কলা তাই আমাদের প্রতিদিন খাদ্য তালিকাতে একটি করে কলা রাখা উচিত। কলা আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত কলা খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কলার উপকারিতা অনেক প্রিয় পাঠক-পাঠিকা আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।
অনেক সুন্দর একটা পোস্ট । ধন্যবাদ আপনাকে