কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলাকে সুপার ফুট বলা হয়। কারণ কলা সব জায়গাতেই এবং সব সময় পাওয়া যায়। কলা হচ্ছে একটি বারোমাসি ফল কলার উৎপন্ন বাংলাদেশ ১২ মাস হয়ে থাকে। কলা যেরকম আমাদের দেশে উৎপন্ন হয় সেরকম এটির দামও কম আর এটি আমারা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকে কেউ সকালের নাস্তার সঙ্গে কেউ চায়ের দোকানে বসে থেকে পেটের ক্ষুধা মেটাতে আবার কেউ কাঁচা কলার সবজি রান্না করে অথবা ভর্তা করে খেয়ে থাকে। কলা যে রকম সহজেই খাওয়া যায়, সেই সঙ্গে কলায় আছে ২০ টির ও বেশি পুষ্টিগুণ উপাদান। কলা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আমাদের দেশে পাকা কলার যেমন চাহিদা অনেক সেইসঙ্গে কাঁচা কলারো চাহিদা অনেক কাঁচা কলা অনেকেরই রান্না করে অথবা ভর্তা করে খেতে পছন্দ করে তাই আজকে আমরা জানবো কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
কলা আমাদের কাছে খুবই পরিচিত. কলা যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনি এটা পুষ্টিতে ভরপুর। তবে কলার দুইটি বৈশিষ্ট্য আছে কলা যেমন ফল হিসাবে খাওয়া যায় তেমনি সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। পাকা কলাকে ফল হিসেবে খাওয়া হয় আর কাঁচা কলাকে সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। পাকা কলাতে যেমন পুষ্টিগুনে ভরপুর তেমনি কাঁচা কলাতেও পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকে।
পাকা কলার মত কাঁচা কলাতেও প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। কাঁচা কলা তে আছে ফাইবার, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি৬, প্রোভিটামিন-এ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক এবং আরো বিভিন্ন উপাদান কাঁচা কলাতে থাকে। এতক্ষণে জানলাম কাঁচা কলায় কি কি উপাদান আছে, চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক কাঁচা কলার উপকারিতা সম্পর্কে।
- কাঁচা কলা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কাঁচা কলা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। অনেকেরই দেখবেন তৈলাক্ত বা চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে ফুট প্রয়োজনে শুরু হয় এই সময়টাতে আপনি কলার সবজি রান্না করে খেতে পারেন।
- কাঁচা কলাতে আছে ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত খাদ্য তালিকাতে কাঁচা কলা রাখলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- যাদের ডায়াবেটিস সমস্যা আছে রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেক বেশি তাদের জন্য কাঁচা কলার সবজি বেশি উপকারী। কাঁচা কলার সবজি রক্তের সুগারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে পাশাপাশি ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য, সংক্রমণ,সংক্রামক, ডায়রিয়া এবং কোলন ক্যান্সারের মতো রোগে কেউ আক্রান্ত থাকলে কাঁচা কলার সবজি এর সমস্যাগুলোর সঙ্গে লড়াই করে সুস্থ হতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল সেন্টার অফ বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (এনসিবিআই)-এ প্রকাশিত একটি মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে কাচা কলায় ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এর মত রোগের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার একটি মরণ বাধি রোগ আমরা সকলেই জানি তবে ক্যান্সার চিকিৎসার পাশাপাশি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীকে কাঁচা কলার সবজি খাওয়ানো জন্য ডাক্তারেরা বলে থাকে। এন সি পি আই প্রকাশিত এক মেডিকেল রিপোর্ট বলা হয়েছে কাচা কলা তে প্রচুর রোগ প্রতিরোধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে, কাঁচা কলা বিভিন্ন রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই যেকোনো রোগ আক্রান্ত হলে চিকিৎসার পাশাপাশি কাঁচা কলার সবজি খাওয়া বেশ উপকারী।
- কাঁচা কলাতে আছে পটাশিয়াম যা আমাদের মাংসপেশি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং মাংসপেশিতে সমস্যা থাকলে নির্মূল করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের মাংসপেশিতে সমস্যা আছে তাদের জন্য কাঁচা খোলার সবজি বেশ উপকারি।
- কাঁচা কলা পাচনতন্ত্রের উন্নতি করে আমুসা এবং পেটের দূষিত ময়লা ব্যাকটেরিয়া রোগ রোধ করে থাকে কাঁচা কলার ভর্তা বা সবজি।
- কলাতে আছে বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস যেগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। আর এই উপকার গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ত্বকের সমস্যা সমাধান আমাদের ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় চুলকানি, ব্রণ এবং বিভিন্ন এজমা আর এই সমস্যাগুলো নির্মূল করে থাকে কলার ভিতরে থাকা ভিটামিন ও প্রোটিন এর উৎসগুলো। তাই যাদের ত্বকের সমস্যা আছে কাঁচা অথবা পাকা কলা খাদ্য তালিকাতে রাখতে পারেন।
কাঁচা কলার অপকারিতা
কাঁচা কলার যেমন উপকারিতা আছে। তেমন কাঁচা কলার অপকারিতা আছে সবকিছুই অতিরিক্ত পরিমাণ খেয়ে নিলে যেমন সমস্যার সৃষ্টি হয় তেমনি কাঁচা কলা অতিরিক্ত খেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে কাঁচা কলায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আছে। অতিরিক্ত কাঁচা কলা খেলে শরীরে ফাইবারের মাত্রা বেড়ে যায়। আর ফাইবারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে পাচনতন্ত্রকে দুর্বল করে দেয় যার কারণে আমাদের পেটের ভেতরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়।
বেশি পরিমাণে কলা খেলে অথবা কলার ভর্তা পরিমানের চাইতে অনেক খেয়ে ফেললে গ্যাস্ট্রিক এবং কৃমি এ ধরনের সমস্যায় ভুগতে হতে পারে।
অতিরিক্ত কলা খাওয়ার কারণে বুকে জ্বালা এবং এসিড রিফ্লেক্স-এর মত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
বর্তমান সময়ে এলার্জির সমস্যায় অনেকেই জড়িত তাই আপনার যদি কলাতে অ্যালার্জি থাকে তাহলে কলার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন।
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ
কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। কলা কাঁচা এবং পাকা দুই ভাবে খাওয়া যায়। একটি কাঁচা কলার যেমন গুণ আছে তেমনি একটি পাকা কলার গুন আছে।
কাঁচা কলার পুষ্টিগুণ এর তালিকা।
- ভিটামিন-এ
- ভিটামিন-বি৬
- ভিটামিন-বি
- ভিটামিন-সি
- পটাশিয়াম
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফসফেট
- কার্বোহাইড্রেট
- ক্যালসিয়াম
- আয়রন
- প্রোটিন
- চর্বি
- শক্তি ও জল
- চিনি ও মাড়
- দস্তা ও তামা
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জন্য অনেক উত্তেজনাপূর্ণ সময়, গর্ভাবস্থার সময় একজন মায়ের স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন গর্ভবতী মাকে তার শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং পুষ্টির জন্য গর্ভবতী মাকেই বেছে নিতে হবে তার শিশুর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার। খাদ্য তালিকাতে রাখতে হবে তাজা ফল ও শাকসবজি এগুলো হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর, শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে তাজা শাকসবজি এবং মৌসুমী ফল বেশ উপকারী।
অনেক গর্ভবতী মায়েরা কলা খাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন আবার দেখবেন অনেক গর্ভবতী মায়েরা সকালের নাস্তা তে কলা খেয়ে থাকেন। আসলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য কলা খাওয়া নিরাপদ তবে কলা একটি ঠান্ডা জাতীয় ফল তাই সীমিত পর্যায়ে খেতে হবে যেন বাচ্চার নিউমোনিয়া অথবা ভিন্ন রোগে আক্রান্ত না হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় কলা খেলে মা ও সন্তান দুইজনের পক্ষেই বেশ উপকারী। কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর কলায় রয়েছে ফসফেট কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন, চর্বি, শক্তি, জল, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস হচ্ছে কলা। তাই কলা খাওয়া একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য বেশ উপকারী।
কাঁচা কলা আমরা অনেকেই বিভিন্ন ভাবে খেয়ে থাকি কলার পুষ্টিগুণ ভিটামিন অনেক। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে কাঁচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন গর্ভবতী মায়ের জন্য কলা কতটা উপকারী,একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য কলা খাওয়া উচিত কিনা সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন আশা করি।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url