হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ
হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এই সমস্যায় জড়িয়ে আছে অনেক মানুষ। চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে আজ পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ প্রেসারে আক্রান্ত। আজকের আর্টিকেলটিতে হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কে এবং খাদ্য তালিকা।
এছাড়াও প্রেসারে আক্রান্ত হয়ে কি কি সমস্যা হয়, হাই প্রেসার ও লো প্রেসার আক্রান্ত হয়ে থাকলে তার জীবন যাপন কেমন হওয়া উচিত সম্পূর্ণ বিষয়ে তুলে ধরেছি। প্রেসার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ
হাই প্রেসার সমস্যাকে অনেকে আবার হাইপারটেনশন বলে। পৃথিবীর প্রায় ১১৫ কোটি মানুষ হাই প্রেসারের শিকার। কিন্তু পৃথিবীর প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র ১ জন মানুষই এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বাকি ৪ জন মানুষ জানে না হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পর্কে। তবে হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ এর কিছু লক্ষণ আছে চিকিৎসকদের মতে এগুলো লক্ষণ হল।
- চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া, চোখের ঝাপসা দেখা অথবা চোখ মেলে তাকালে কালচে রঙের বিন্দু দেখতে পাওয়া। হঠাৎ করেই দৃষ্টি শক্তি একেবারে কমে যাওয়া এটি হচ্ছে হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ গুলোর একটি।
- অল্পতেই ক্লান্তি আশা, হাই প্রেসার এর অন্যতম একটি লক্ষণ অল্পতেই ক্লান্তি আসা তবে যারা পরিশ্রম করে তাদের ক্লান্তি আসতে পারে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যারা কোন পরিশ্রম করে না তাদের যদি অনেক ক্লান্তি আসে শরীরে এনার্জি না থাকে শরীর দুর্বল মনে হয় তাহলে এটি হাই প্রেসার এর লক্ষণ।
- অল্পতেই মাথা যন্ত্রণা অথবা প্রতিদিন মাথা ব্যথা হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ। অনেকে আছে অল্পতে মাথা যন্ত্রণা করে অনেক মানুষের মধ্যে শব্দের কারণে অল্পতেই মাথা যন্ত্রণা করে এটি হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ।
- অনেকের বিভিন্ন কারণে নাক দিয়ে অল্পতেই রক্ত পড়ে এটি বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে তবে এটি হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ। উচ্চ রক্তচাপ এর কারণে নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে।
- বুকে ব্যথা উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার এর ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা হতে পারে। তার মধ্যে বুকের মধ্যে জ্বালা যন্ত্রণা ব্যথা বেশি হয়ে থাকে এটি হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ।
প্রেসার হাই হলে কি কি সমস্যা হয়
প্রেসার স্বাভাবিকের থেকে অনেক বেশি হলে রোগীর হৃৎপিণ্ড, মস্তিষ্ক, রক্তনালী, কিডনি এবং চোখের সমস্যা হয় এছাড়াও আরো কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয় যেমন।
- হার্ট অ্যাটাক।
- হার্ট ফেইলিউর।
- হৃদরোগ।
- কিডনির সমস্যা।
- হাত পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়া।
- শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হওয়া।
- ব্রেনস্ট্রোক।
তবে এই সমস্যাগুলো থেকে সমাধান পেতে হলে হাই প্রেসার বা অতিরিক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। অতিরিক্ত প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু খাদ্য এবং নিয়ম মাফিক জীবন যাপন করতে হয় তাহলে হাই প্রেসার এর সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যাবে। এসব তালিকা তে রাখতে পারেন ভিটামিন আয়রন এবং ফল জাতীয় খাদ্য। প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এগুলো সাহায্য করে।
হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত না
অনিয়মিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওজন এবং সঠিক খাদ্য অভ্যাসের কারণে অনেকেই হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। একজন মানুষের শরীরে ১২০ থেকে ৮০ মিলিমিটার ও ৯০ থেকে ৬০ মিলিমিটার প্রেসার এর মাত্রা থাকলে এটিকে স্বাভাবিক প্রেসার ধরা হয়। তবে অনেক খাবার আছে যেগুলো খাওয়ার ফলে আমাদের প্রেসার অনেক হাই হয়ে যায়। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত না আমাদের জন্য।
- লবণে আছে অতিরিক্ত সোডিয়াম, অতিরিক্ত সোডিয়ামের ফলে প্রেসার আরো বেড়ে যায়। তাই যাদের হাই প্রেসার আছে তাদেরকে প্রথমে লবণ কম খেতে হবে খাবারের সঙ্গে লবণের পরিমাণটা কম রাখতে হবে। এছাড়াও সোডিয়াম জাতীয় প্রতিটি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে, যেসব খাদ্যে সোডিয়াম আছে সে খাদ্যগুলো প্রেসার হাই করে।
- ফাস্ট ফুড প্রতিটি মানুষের মুখরোচক খাবার বর্তমান সময়ে সারাদিনের ভিতরে কোন না কোন সময় একটি মানুষ ফাস্ট ফুড এবং বেকারির খাবার খেয়ে থাকে। এইসব প্যাকেট জাত এবং প্রসেসর খাবারের মধ্যে সবথেকে বেশি হাই প্রেসার এর উপাদান থাকে। ফাস্ট ফুড এবং বেকারির খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, গ্রিজারবেটিভ, বিষাক্ত রং এবং ক্ষতিকর চর্বি, ডালডা থাকে। এই উপাদানগুলি হাই প্রেসার রোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর, এছাড়াও রাস্তার পাশের ফাস্ট ফুড তৈলাক্তক ও চর্বি জাতীয় মুখ্য খাবার গুলো হাই প্রেসার রোগীর জন্য খুবই ক্ষতিকর।
- কফিতে আছে ক্যাফেইন যা রক্তনালীকে শুরু করে দেয়, এর ফলে হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে যায়। যার কারণে স্ট্রোক করা এবং মাথায় রক্ত উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তাই যাদের হাই প্রেসার আছে তাদেরকে চা এবং কফির বদলে গ্রিন টি খেতে পারেন। যাদের হাই প্রেসার এর সমস্যা আছে তাদেরকে চা এবং কফি খাওয়া যাবেনা।
- লাল মাংস বা রেড মিট, অর্থাৎ গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং মহিষের মাংস এ লাল মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে যার কারণে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক করার ঝুঁকি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তাই যাদের হাই প্রেসার এর সমস্যা আছে তাদেরকে রেড মিট অর্থাৎ লাল মাংস একেবারে খাওয়া উচিত না।
- অতিরিক্ত ওজনের কারণে হাই প্রেসার এর মত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের শরীরে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে যার ফলে শরীর মোটা হয়ে যায় এবং হাই প্রেসার এর মত মারাত্মক রোগ আক্রান্ত হয়ে থাকে।
- আচার এবং সস জাতীয় খাবারগুলোতে লবণ এবং চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যা হাই প্রেসার রোগীর শরীরের জন্য একেবারে উপযুক্ত নয়। এ খাবারগুলো অনেক মুখরোচক তবে একজন প্রেসারের রোগীর জন্য আচার বা সস একেবারে খাওয়া যাবে না।
- ডিমের কুসুম এবং মুরগির চামড়া খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায় তাছাড়া মুরগির চামড়ায় প্রচুর চর্বি থাকে যার ফলে মানুষের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে স্ট্রোক এর সম্ভাবনা থাকে।
প্রেসার হাই হলে কি খেতে হবে
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন এর প্রয়োজন থাকে এবং কিছু খাদ্য থাকে যেগুলো খেলে হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে খাদ্য ভাসে যে অনেকটাই পরিবর্তন আনতে হবে তা কিন্তু না। অল্প কিছু খাবার এর পরিবর্তনে আমরা আমাদের হাই প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব প্রতিদিন খাদ্য তালিকাতে যেসব সবুজ শাকসবজি এবং তাজা ফল রাখতে হবে সেগুলো হলো লেবু, মালটা, কমলা, জাম্বুরা, পেয়ারা, আপেল, আমলকী, কলা, ডালিম, নাশপাতি, পেঁপে এ ধরনের ফলগুলো খেতে পারেন।
এবং প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে যেসব সবুজ শাকসবজি রাখবেন সেগুলো হচ্ছে পালং শাক, লাল শাক, মুলা শাক, কলমি শাক, পাট শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, লাউ, শসা, মুলা, বেগুন, কুমড়া, মটরশুঁটি ইত্যাদি এ ধরনের শাক সবজি প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে এই খাবারগুলো হাই প্রেসার রোগীর খাদ্য তালিকাতে রাখা উচিত।
হাই প্রেসার হলে কি কি ফল খাওয়া উচিত
এগুলো খাদ্যের পাশাপাশি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে পটাশিয়াম-জাতীয় খাবার, পটাশিয়াম জাতীয় খাবার গুলো হাই প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আঙ্গুর পটাশিয়াম এর প্রাকৃতিক উপাদান, নিয়মিত আঙ্গুর খেলে হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
একটি কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে, প্রায় ৪৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে একটি কলায়। যা কিনা প্রেসার কমিয়ে আনতে অনেক সাহায্য করে।
ডাবের পানিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অন্যান্য বিভিন্ন উপাদান জা প্রেসার কমে আনতে সাহায্য করে।
এছাড়াও তরমুজ, ধোনের পাতা, পেঁয়াজ, রসুন, , কালিজিরা এবং পাতিলেবু প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকা আর্টিকেলটিতে হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ, প্রেসারের রোগীর খাদ্য তালিকা, চিকিৎসা আক্রান্ত হওয়ার কারণ এছাড়াও জীবন যাপন সম্পর্কে আলোচনা করেছি আর্টিকেলটি পড়ে আশা করি হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url