মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করব মাসিক বা মেনোপজ নিয়ে সাধারণত আমাদের দেশের মেয়েরা মাসিক নিয়ে অনেক সংকোচ বোধ করে। মাসিক শুরু হওয়ার মুহূর্তে পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেনা। নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে কোন উত্তর খুঁজে পায় না তাই আমরা আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে মাসিক বা মেনোপজ এর সব ধরনের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ মাসিক বন্ধ হলে কি করতে হবে। নিয়মিত মাসিক না হলে কি সমস্যা হয় মেয়েদের মাসিক হওয়ার লক্ষণ। মাসিক কেন হয় সমস্ত প্রশ্নের সুন্দর উত্তর পেতে আমাদের লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ
মাসিক বা মেনোপজ বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকে তবে সাধারণত একটি মেয়ে গর্ভধারণ করলে মাসিক বন্ধ হয়ে যাই এটা স্বাভাবিক। একটি নির্দিষ্ট সময়ে মেয়েদের মাসিক বা ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যায় সেটি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে। তবে যদি একটি মেয়ের ১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সে মাসিক বন্ধ হয়ে যায় কিংবা মাসিক চক্র শুরু হয় না।সেটি কখনো কখনো দুশ্চিন্তার কারণ হয় আবার কখনো সেটি শারীরিক সমস্যার কারণেও হয়ে থাকে।
মাসিক হচ্ছে কিন্তু হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়া এটি শারীরিক কোন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা প্রজনন অঙ্গের কোন সমস্যার কারণে স্বাভাবিক মাসিক হওয়া বন্ধ হতে পারে। ১৮ বছর বয়সী একজন নারীর হঠাৎ করে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া কে বলা হয় অ্যামেনোরিয়া। অনিয়মিত মাসিক হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রথমে আসে সময়সীমা আপনার মাসিক যদি সময়সীমা লংঘন করে তাহলে এটা মেনোপজের লক্ষণ।
মাসিকের মাত্রা কমে যাওয়া আপনাকে সেদিকের লক্ষ্য রাখতে হবে আপনার মাসিকের মাত্রা আগের তুলনায় কমে যাচ্ছে কিনা এটাও একটি মেনোপজের লক্ষণ। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রক্তপাত হচ্ছে কিনা সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে এটি মেনোপজ এর লক্ষণ। অতিরিক্ত ব্যথা অনুভব হওয়া কিংবা মাসিকের সময় মেজাজ খিটখিটে হওয়া। ক্লান্তি অনুভব হওয়া মেনোপজের লক্ষণ। এর মধ্যে আরো কিছু ছোট ছোট লক্ষণ আছে যেমন
- পেট বা সারা শরীর ব্যথা।
- মাসিক চক্র ৩৫ দিনের বেশি প্রবাহিত হওয়া।
- মুখের ত্বকের সমস্যা হওয়া অতিরিক্ত ব্রণ বের হওয়া।
- ভারী রক্তচাপ জমাট বাধা রক্তচাপ হওয়া।
- মাথাব্যথা মেজাজ খিটখিটে হওয়া।
- চুল পড়া স্তন ব্যথা করা।
মাসিক বন্ধ হলে কি করতে হবে
মেয়েদের মাসিক বন্ধ হওয়া এটা অস্বাভাবিকের কিছু না ৪৫ থেকে ৫০ বছর বয়সে সব মেয়েদেরই মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অল্প বয়সে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া এটি একটি দুশ্চিন্তার কারণ। বিশেষ করে যারা অবিবাহিত তাদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে এটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত হরমোনের কারণ অতিরিক্ত পরিশ্রম কিংবা দুর্বলতার জন্য মাসিক হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণে চিকিৎসকরা সাধারণত হরমোন জাতীয় চিকিৎসা করে থাকে। যেগুলা আমরা পিল হিসেবে চিনে থাকি। এই পিল গুলো খাওয়ার ফলে শরীরে নানান ধরনের ইফেক্ট পরে যেমন ধরেন মোটা হয়ে যাওয়া মাথার চুল উঠে যাওয়া খাবারে অরুচি খাবার খাওয়ার পরে পেটের মধ্যে গোলমাল মাথাব্যথা পা ব্যথা সমস্ত শরীর ব্যথা দুশ্চিন্তা ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে।
তাই মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে হোমিও অথবা ঘরোয়া চিকিৎসা সবথেকে ভালো উপকার হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক হোমিও বা ঘরোয়াভাবে আমরা কি করে বন্ধ হয়ে যাওয়া মাসিক থেকে সুস্থ হতে পারি।
- আদা শরীরের অনেক উপকারে আসে কাঁচা আদা থেঁতলে করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে বন্ধু মাসিক সুস্থ হয়। আদার মধ্যে আছে জিঞ্জেরল যার শরীরের হরমোন ভারসাম্য কে সহায়তা করে । আদার রস লেবুর রস ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়াই।
- কাঁচা পেঁপের রস অনিয়মিত মাসিক নিরাময়ের জন্য কাঁচা পেঁপের রস খুবই ভালো কাজ করে। কাঁচা পেঁপের রস নিয়মিত খেলে জরায়ুর সংকোচ বাড়ায় যা অনিয়মিত মাসিক দূর করতে খুবই কার্যকরী। তবে নিয়মিত মাসিক হলে কাঁচা পেঁপের রস খাওয়া যাবে না।
- কুশরের বা আখের গুড় প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে শরবত বানিয়ে খেলে অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হতে সাহায্য করে।
- হলুদে আছে নানা উপকারিতা হলুদ আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। গরম দুধ, মধু, কাঁচা হলুদ একসঙ্গে খেলে জরায়ুর ক্রাম্প কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ নিয়মিত খেলে আপনার অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত হতে সাহায্য করে।
- অ্যালোভেরা আপনার হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দূর করে। ফলে আপনার অনিয়মিত মাসিক স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম মাসিকে আক্রান্ত মেয়েদের হরমোন নিয়ন্ত্রণে আপেল সিডার ভিনেগার সাহায্য করে।
- দারুচিনি অনিয়মিত মাসিক নিরাময় করতে সাহায্য করে। দারুচিনি জরায়ুর রক্ত প্রবাহ করতে সাহায্য করে থাকে।
- অনিয়মিত মাসিকের অন্যতম কারণ খাদ্য অভ্যাস এই সময়ে রাস্তার ফাস্টফুড,তৈলাক্ত খাবার, মুখরোচক খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে নানান ধরনের হরমোনের অভাব সৃষ্টি হয় যার ফলে অনিয়মিত মাসিক হয়ে থাকে। তাই আপনাকে আপনার খাবারের প্রতি নজর রাখতে হবে যেন খাবার তালিকায় সবুজ শাকসবজি ফলমূল মাছ-মাংস থাকে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করলে, ওজন বজায় রাখে। শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান রাখে এবং মাসিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
- বন্ধ হওয়ার নানান কারণ থাকতে পারে আপনার পক্ষে মাসিক বন্ধ হওয়ার কারণ বের করতে অনেক কষ্ট সাধ্য হবে। তাই মাসিক ঠিক সময়ে না হলে একজন গাইনী ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিক ভাবে চলাফেরা করলে মাসিক নিয়ন্ত্রণে আসবে।
নিয়মিত মাসিক না হলে কি সমস্যা হয়
অনিয়মিত মাসিক পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের কারণে হয়। তবে আরো অনেক কারণ আছে যার কারণে নিয়মিত মাসিক হয় না। এই সমস্যা হলো অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অনিয়মিত মাসিক হলে যেসব সমস্যা হয়।
- সন্তান ধারণ ক্ষমতা কমে যায়।
- রক্তপাত একবারে কম হতে পারে।
- মানসিক অশান্তি মেজাজ খিটখিটে হওয়া।
- অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ।
- শরীর দুর্বল মাথা ঘোরানো বমি বমি ভাব।
মেয়েদের মাসিক কি কারনে হয়
মাসিক কোন রোগ নয় এটি নারী দেহের স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। একটি মেয়ের প্রতি মাসে ৪ থেকে ৭ দিন মাসিক হয়ে থাকে। মাসিক একটি সাধারণ বিষয় মেয়েদের মাসিক হয় বলে মেয়েরা গর্ভধারণ হওয়ার ক্ষমতা রাখে। বয়সন্ধিকালে মেয়েদের ডিম্বাশয়ে তিন থেকে চার লাখ ডিম্বাণু থাকে।
হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারি হরমোন নিষ্কৃত করে ডিম্বাশয় চক্রে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু সঠিকভাবে নিষিক্ত না হলে শুরু হয় মেয়েদের মাসিক আর নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর এন্ডোমেট্রইয়ায়মের রক্তবাহী নালীর আবরণ ভেঙ্গে পড়ে ও রক্তের সাথে কয়েক দিন ধরে যৌনিপথ দিয়ে যে রক্তনালী বের হয় তাকে বলা হয় মাসিক।
মেয়েদের মাসিক হওয়ার লক্ষণ
প্রতিটি মেয়েরই মাসিক হয়ে থাকে। তবে সবারই শারীরিক গঠন এক না হওয়ায় কার কখন মাসিক হবে তা সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে কিছু কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো থেকে বোঝা যায় মাসিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মাসিক শুরু হওয়ার আগে যে লক্ষণ গুলো দেখা দেয় তাকে বলা হয় প্রিম্যানস্তুয়াল সিনড্রোম। প্রতিটি মেয়েরই প্রিম্যানস্তুয়াল সিনড্রোম হয়ে থাকে।
প্রিম্যানস্তুয়াল সিনড্রোমের এর কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দ্বারা বোঝা যায় একটি মেয়ের মাসিক চক্র শুরু হবে চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
- টেনশন বা অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়া।
- মেজাজ পরিবর্তন হওয়া অতিরিক্ত বিরক্তি লাগা বা রাগ হওয়া।
- ঘুমাতে সমস্যা হওয়া বা মনোযোগ না দিতে পারা।
- ক্ষুধা না লাগা বা খাবারের রুচি পরিবর্তন হওয়া।
- পুরো শরীর ব্যথা করা কিংবা পেশিতে ব্যথা করা।
- মাথাব্যথা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি আশা।
- ওজন বৃদ্ধি হওয়া।
- বদহজম হওয়া কিংবা পেট ফাঁপা।
- ত্বকের সমস্যা হওয়া কিংবা মুখে অতিরিক্ত ব্রণ বের হওয়া।
- স্তন বড় হয়ে যাওয়া।
- কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হওয়া।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url