মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
একটি মেয়ের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাসিক বা পিরিয়ড নিয়মিত হওয়া, মেয়েদের প্রায় ৯ থেকে ১২ বছর বয়সে মাসিক বা পিরিয়ড হয়ে থাকে যেটি গর্ভধারণের জন্য খুবই প্রয়োজন।
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো মাসিক বা পিরিয়ড না হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিনা আরো জানবো কতদিন মাসিক না হলে গর্ভবতী হয় গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিন পর বোঝা যায় ও বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে এবং বাচ্চা না হওয়ার কারণ ও প্রতিকার বিস্তারিত জানতে লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
বর্তমান সময়ের মেয়েরা মাসিক বা ঋতুস্রাব সম্পর্কে চোখ লজ্জা শরমে পরিবারের
সঙ্গে আলাপ করতে পারে না। তাই আমরা মাসিক বা ঋতুস্রাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
করব। মাসিক ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড এটি সাধারণত একটি মেয়ের ৯ থেকে ১২ বছর
বয়সে হয়ে থাকে। যখন একটি মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তার দেহের হরমোনের
প্রভাবে নির্দিষ্ট সময় পর পর যৌনপদ দিয়ে যে রক্ত ও স্রাব বের হয় তাকেই
মাসিক বা পিরিয়ড বলা হয়।
বিবাহিত মেয়ে স্বামীর সঙ্গে সহবাস করলে মেয়েটির ডিম্বাণু স্বামীর
শুক্রাণুর সঙ্গে নিস্কৃত হয় এবং ডিম্বাণু ফ্যালোপিয়ান কিউবে থাকা
অবস্থায় এন্ডোমেট্রিয়ামে সংযুক্ত থাকে। তাহলে মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাবে।
এটা স্বাভাবিক কারণ মেয়েটির গর্ভে এখন বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে।
মেয়েদের সহবাসের পর মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে এটিকে গর্ভধারণের লক্ষণ বলা
হয়। তাহলে এখন বুঝতেই পারছেন মাসিক না হলে কি বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে মেয়েদের বয়স যখন ৪৫ থেকে ৫০ হয়ে যায় তখন মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ
হয়ে যায় এটা স্বাভাবিক নিয়ম। তাই মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে
সাধারণভাবে ধরা যায় মেয়ে গর্ভধারণ করেছে মেয়েটির সন্তান প্রসব না হওয়া
পর্যন্ত আর মাসিক হবে না।
তবে এখনকার সময়ে বিবাহিত কিংবা অবিবাহিত মেয়েদের মাসিক নিয়মিত হয় না অথবা বন্ধ হয়ে যায়। সেটি যেকোনো কারনে বন্ধ হতে পারে কেন বন্ধ হয়েছে তা সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যাবে না তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একটি মেয়ের যেকোনো কারণে মাসিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে অসুস্থতার কারণেও কিংবা পুষ্টিহীনতার কারণে তাই অবশ্যই মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কত দিন পর বোঝা যায়
মা হবার অনুভূতিটাই অন্যরকম, প্রতিটি মেয়ের জীবনে মা হবার সুসংবাদটি রঙিন মুহূর্ত হয়ে থাকে, তার মত খুশি আর কেউ হয় না। প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কতদিনে বোঝা যায়। সাধারণত মাসিক বা পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া কে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে নেওয়া হয়।
কিন্তু মাসিক বন্ধ হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে যেমন ধরেন রক্তশূন্যতা, ভিটামিনের অভাব, অসুস্থতা নানা কারণে মাসিক বন্ধ হতে পারে। তবে পিরিয়ড মিস হয়ে যাওয়াকেই গর্ভবতী হওয়ার প্রধান লক্ষণ হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু আরো বিভিন্ন লক্ষণে বোঝা যায় গর্ভবতী হয়েছে কিনা চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি লক্ষণ থাকে গর্ভবতী হওয়ার।
- মাসিক বন্ধ হওয়া ছাড়াও নানা শরীরবৃত্তিক ঘটনা আছে গর্ভবতী হওয়ার যেমন মর্নিং সিকনেস বা বা সকালে ঘুম থেকে উঠে দুর্বল বোধ করা কিংবা সারাদিনর যে কোন সময় মাথা ঘোরানো ক্লান্তি অনুভব হওয়া।
- গর্ভবতী হওয়ার ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর বমি হওয়া। এ সময় সকালে বা দিনের যেকোনো সময় বমি হতে পারে। তবে পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে বেশিরভাগ মেয়েদের বমি হয়।
- গর্ভবতী হওয়ার প্রধান লক্ষণ হচ্ছে স্তনে ব্যথা, ফুলে যাওয়া বা ভারী হওয়া প্রথম সপ্তাহে বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এ সমস্যাটি হয়ে থাকে।
- গর্ভবতী হওয়ার পর মেজাজ খিটখিটে হতে পারে আবার হাসিখুশি লাগে মাথা ঘোরায় ক্লান্তি অনুভব হয় হঠাৎ করে কান্না আসে আবার টেনশন হতে পারে এগুলা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।
- গর্ভবতী হওয়ার পরে প্রতিটা নারীর খাবারে পরিবর্তন ঘটে বিশেষ করে শাকসবজি ফলমূল জাতীয় খাবার পছন্দ করে। অনেক সময় দেখা যায় তার প্রিয় খাবার খাবারের টেবিলে কিন্তু খেতে চায় না এমন হতে পারে এটা গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।
- এই ধরনের লক্ষণ গুলো যদি এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই প্রেগনেন্সি টেস্ট করবেন। যেকোনো ফার্মেসিতেই পাওয়া যায় এখন অনেক উন্নত মানের প্রেগন্যান্টই টেস্ট বের হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসি প্রস্তাব দিয়ে টেস্ট করলে ভালো রেজাল্ট আসে।
বাচ্চা নেওয়ার জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময়
পিরিয়ড হলো একটি নারীর ডিম্বাণু উৎপাদনের ক্ষমতা তবে পিরিয়ড হলেই যে ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু উৎপন্ন হবে এমনটা না। মাসিকের পরে যখন সাদাস্রাব দেখা দেয় না তখন গর্ভধারণের সম্ভাবনা খুব কম থাকে। মাসিকের রাস্তা হালকা ভেজা কিন্তু সাদাস্রাব দেখা যায় না তখন গর্ভধারণের মাত্রা কম থাকে যেমন এক শতাংশর মতো।
বাচ্চা নেওয়ার আগে অবশ্যই একটি মেয়েকে তার মাসিক বা পিরিয়ড এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত কম বেশি প্রতিটি মেয়ের মাসিক ২৮ দিন পর হয়ে থাকে তবে কিছু কিছু মেয়েদের মাসিক ২৪ দিনেও হয় আবার ৩৬ দিনেও হয় এতে ভয়ের কোন কারণ নেই।
কারণ পিরিয়ড হওয়ার প্রথম দিন ধরে ১১ থেকে ১৯ তম দিন পর্যন্ত বাচ্চা
হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে তাই পিরিয়ড যেকোনো সময় হলে সমস্যা হবে না পিরিয়ডের
প্রথম দিন থেকে হিসাব রাখতে হবে তারপরে উপযুক্ত সময় বোঝে সহবাস করলে বাচ্চা
হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে অন্য কোন দিনে সহবাস করলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কেমন থাকে। ১১ থেকে ১৯ তম দিন পর্যন্ত ডিম্বানু উৎপাদনের ক্ষমতা বেশি থাকে কিন্তু তারপরে যে ডিমবানু জরাসয়ে উৎপন্ন হয় না এমনটা না। তাই সহবাসের যেকোনো সময় বাচ্চা হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই অবশ্যই সহবাসের সময় বাচ্চা নিরোধক কিছু ব্যবহার করলে বাচ্চা হবে না।
বাচ্চা না হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
আমাদের দেশে এমন দম্পতি আছে যাদের ইচ্ছা আছে সন্তান নেওয়ার কিন্তু সন্তান হচ্ছে
না বর্তমানে এ রোগটি আমাদের দেশে খুবই পরিচিত চিকিৎসকদের ভাষায় রোগটিকে বলা
হয় ইনফাটিলিটি বা বন্ধ্যত্ব এর রোগটির হবার কারণ নারী ও পুরুষ উভয়েরই
সমান থাকে তবে কিছু কিছু কারণ বোঝা যায় না চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি সমস্যার
কারণে বাচ্চা হয় না।
- যদি কোন দম্পতি একসাথে যদি এক বছর থাকে আর তারা যদি বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করে এরপরও যদি তাদের সন্তান না হয় তাহলে তাদের ইনফাটিলিটি বা তাদের বাচ্চা ধারণ ক্ষমতার অক্ষমতা আছে বলে ধরা হয়।
- নারীরা প্রধানত চার থেকে পাঁচটি কারণে বাচ্চা ধারণে অক্ষম হয়ে থাকে পলিসিস্টিক ওভারি যার ফলে ওবাম আসার কথা ওবাম আসে না
- হর মনের কারণ হতে পারে হরমোনের কারণে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা থাকে না
- ডিম্বাশয় ডিম্বাণু উৎপন্ন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ডিম্বাণু বাচ্চ প্রযোজনের জন্য ডিম্বানু প্রস্তুত না।
- অনেক সময় জরায়ুতে ইনফেকশন হওয়ার কারণে অথবা টিউমার কিংবা বিভিন্ন রোগ হওয়ার কারণে মা তার গর্ভধারণ ক্ষমতা হারাই।
- আবার জন্মগত কারণেও ডিম্বানু আসে না টিউব ব্লক থাকে যার ফলে মা হবার সক্ষমতা হারায়।
- শুধু যে নারীদের সমস্যা থাকে তা না পুরুষেরা সমস্যা থাকে যেমন ধরেন শুক্রাণু কমে যাওয়া কিংবা শুক্রাণু না থাকা।
- শুক্রাণু তৈরি হওয়ার অন্ডকোষ কোন কারণে শুক্রাণু তৈরিতে অক্ষম কিংবা কোন সমস্যা আছে অন্ডকোষে।
- শুক্রাণু আসার নালিতে কোথাও বাধা সৃষ্টি হচ্ছে যার ফলে শুক্রাণু পর্যাপ্ত পরিমাণ আসতে পারছে না।
- আবার শুক্রাণুর পরিমান ঠিক আছে কিন্তু শুক্রাণুতে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা ঠিক নেই ফলে ডিম্বাশয়ে ফার্টিলাইজ করতে পারছে না।
- অন্ডকোষে কিংবা লিঙ্গে আঘাত পাওয়ার ফলে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা হারায়।
- ডায়াবেটিস কিংবা ছোটবেলা থেকেই সমস্যা থাকার ফলে বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে থাকে অনেক পুরুষ।
অনেক নারী পুরুষ আছে যারা গর্ভধারণ করার চেষ্টা করছে কিন্তু সফল হচ্ছেন না এ
অক্ষমতার জন্য বাংলাদেশে অনেক ধরনের চিকিৎসা বের হয়েছে যার মাধ্যমে
সন্তান সক্ষমতা ফিরে পাওয়া যায় চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি করা লাগে।
- মাসিক বা পিরিওড সঠিক নিয়মে হচ্ছে কিনা তার তথ্য রাখা।
- ওভুলেশনএর দিকে লক্ষ্য রাখা সাদা স্রাব এর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে অনেক সময় সাদাস্রাব এর কারণে বাচ্চা হওয়ার প্রজনন ক্ষমতা ৩ থেকে ০ নেমে আসে।
- নিয়ম অনুযায়ী যৌন মিলন করতে হবে পিরিয়ডের ৯ থেকে ১৯ দিন এর মধ্যে বাচ্চা গর্ভধারণের সক্ষমতা বেশি থাকে।
- দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে অনেক সময় ওজন বৃদ্ধির কারণে জরায়ুতে চর্বি হয়ে যায় যার ফলে শুক্রাণু সঠিকভাবে কাজ করতে না পারায় বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম হয়ে যায় নারী।
- ভিটামিন জাতীয় খাবার খেতে হবে শরীরে ভিটামিনের অভাবে ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু আসে না তাই ভিটামিন খাবারের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- ধূমপান ও মদ্যপান কমাতে হবে এগুলোর কারণে শুক্রাণু উৎপান্ন কমে যায়। এসব নিয়ম মেনেও ভালো ফলাফল না পেলে অবশ্যই একজন ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে এখন অনেক উন্নত মাধ্যমে বাচ্চা নেওয়ার সম্ভাব হচ্ছে।
প্রিয় পাঠক আশা করি মাসিক না হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিনা কিংবা
মাসিক না হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ, সহবাসের
উপযুক্ত সময়, বাচ্চা না হওয়ার কারণ সম্পর্কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি
আশা করি আপনি আমার লেখাটি পড়ে উপকৃত হয়েছেন।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url