অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে। দৈনন্দিন জীবনে চুল পড়ার সমস্যাটি কম বেশি প্রতিটি মানুষেরই হয়ে থাকে। বিশেষ করে এই সমস্যা তরুণ প্রজন্ম থেকে সৃষ্টি হয়। বিশেষ কিছু ভিটামিন, অতিরিক্ত রাত জাগা ও কিছু শ্যাম্পুর কারণে আমরা আমাদের চুলগুলি অকালে হারিয়ে ফেলি।
তাই আজকে আমি আপনাদেরকে আর্টিকেলটির মাধ্যমে অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। কি কারণে অতিরিক্ত চুল পড়ে, ছেলে ও মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার কি। চুল পড়ার প্রতিকার জানতে হলে লিখা গুলো মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
চুল পড়ে না এমন মানুষ খুব কমই আছে, দৈনন্দিন জীবনে কমবেশি চুল পড়া সমস্যায় সবাই ভুগে। একটি প্রতিবেদনে আমেরিকান একাডেমী অব জার্মাটোলজিস্ট বললেন প্রতিদিন চুল পড়া স্বাভাবিক কিন্তু অতিরিক্ত চুল পড়া এটি অনেক সমস্যার কারণে হতে পারে। ঘুমের অভাব অথবা অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, আবার বংশগত কারণেও চুল পড়তে পারে।
এছাড়া মানসিক চাপ, চুলে অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা, মাথার ত্বকের সমস্যা, এছাড়া হরমোনের সমস্যা ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার জনিত রোগের কারণে চুল পড়ে যাই। একটি চুলের বয়স ২ থেকে ৮ বছর হয়ে থাকে তাই প্রতিদিন কিছু না কিছু চুল পড়াটা স্বাভাবিক এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
মেয়েদের অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ
চুল পড়ে যাওয়া এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় কিন্তু পরিমাণের চাইতে অধিক চুল পড়া এটি একটি সমস্যা। জীবন দশায় নারী ও পুরুষ উভয়েই চুল পড়া রোগে ভুগে তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে চুল পড়া নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকে। চিকিৎসকদের ভাষায় নারীদের চুল পড়া সমস্যা কে বলা হয় অ্যানড্রোজেনেটিক অ্যালোপিসিইয়া।
এই সমস্যা হলে মাথার উপরিভাগের ও দুই পাশের চুল উঠে যায় প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ টি পর্যন্ত চুল ওঠা স্বাভাবিক। যখন চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যায় ও নতুন চুল গজাতে পারেনা তখন তাকে সমস্যা হিসাবে নেওয়া হয়। প্রায় এক তৃতীয়াংশ নারী চুল পড়া সমস্যায় ভুগেন।
বেশিরভাগ মেয়েরাই ডায়েট করতে গিয়ে পুষ্টিকর খাবার কম খায় বিশেষত আমিষ, খনিজ ও ভিটামিনের অভাব দেখা দেয়। চুল সুস্থ রাখার জন্য আমিষ বেশি প্রয়োজন। অনেক নারী আমিষের তুলনায় শর্করা বেশি খায় এতে চুল পড়তে পারে। খাদ্য তালিকায় মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডালের মত খাবার রাখতে হবে।
ভিটামিন-ডি ও ভিটামিন-বি ১২ চুলের বৃদ্ধি ঘটায় ও মাথার ত্বকের পুষ্টি যোগায়। এই ভিটামিন গুলোর অভাবে চুল পড়তে পারে তাই মাংস, দুধ, ডিম এর মত খাবার গুলো খাওয়া প্রয়োজন। এতে করে ভিটামিন-ডি ও ভিটামিন-বি ১২ এর ঘাটতি কমায়। ভিটামিনের ঘাটতি বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাল্টি-ভিটামিন ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার ফলে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে চুল পড়তে পারে। অনেক সময় নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ খাই এটি নারীদের চুল পড়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ খাওয়ার আগে এটির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভালোভাবে চিকিৎসকের থেকে জানতে হবে।
অনেক সময় নারীদের গর্ভধারণের পরে চুল উঠে যায়। গর্ভধারণের সময় নারীদের শরীরে নানা ধরনের হরমোনের পরিবর্তন হয় এর ফলে চুল উঠতে পারে। গর্ভধারণের তিন থেকে চার মাস চুল পড়া স্বাভাবিক এরপরও চুল পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চুলে নানান স্টাইল করার ফলে চুল উঠে যায় চুলে হিট দেওয়া, চুলে কালার করা , বিভিন্ন ধরনের জেল ব্যবহার করা, সব সময় চুল শক্ত করে বেধে রাখা, এইসবের কারণে চুল উঠে যায়।
হরমোন-জনিত ও থাইরয়েডের সমস্যার কারণে নারীদের চুল উঠে যায়। এছাড়াও দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার ফলে, শরীরের রক্তস্বল্পতা, ওজন কমে যাওয়া, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, মেনোপজ, মূত্রনালীতে পাথর, এমনকি শারীরিক ভিটামিনের অভাব ও অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার ফলে চুল উঠে যায়।
মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
আমরা এর আগে জেনেছি চুল পড়ার কারণ কি। এখন আমরা জানবো চুল ভালো রাখতে হলে আমাদের কি করা উচিত। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
- নিয়মিত চুলে তেল না দেবার কারণে চুল পড়ে। তেল চুলের জন্য খুবই উপকারী নিয়মিত শ্যাম্পু করার পরে চুলের তেল দিতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের তেল পাওয়া যায় যেমন ধরেন নারিকেল তেল, মিষ্টি কুমড়া তেল ইত্যাদি তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল পড়া থেকে সমাধান পাওয়া যায়।
- শ্যাম্পু করার পরে কন্ডিশনার ব্যবহার না করার ফলে চুল উঠে যায়। আবার গোসলের পরে চুল ভালোভাবে না শুকানোর কারণে। চুল শুকানোর পরে সুন্দরভাবে না হাচড়ানো কারণে চুল পড়ে যায়।
- নিয়মিত শ্যাম্পু না করার কারণে চুলের গোড়াই ময়লা জমে যাওয়া, কিংবা মাথায় খুশকি হওয়ার কারণে চুল উঠে যেতে পারে, তাই আমাদের চুলকে পরিষ্কার রাখা উচিত।
- বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন প্রোটিন আয়রন এর কারণে চুল পড়ে যায় আমাদের সেই ধরনের খাবারগুলো খেতে হবে যাতে ভিটামিন, আয়রন, প্রোটিন থাকে।
- চুলের আগা ফেটে গেলে সেটিকে কেটে ফেলা। ভেজা চুল না হাচড়ানো। ব্লিচিং বা ডাই বেশি না করা।
- মেহেদী পাতা, পেঁয়াজের রস, এলোভেরা, নিম পাতার রস, লেবুর রস, টকদই একসঙ্গে মিশিয়ে ৪০ মিনিট কিংবা ১ ঘন্টা রেখে দেওয়ার পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা।
অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান
চুল তো সবারই পড়ে কারো বেশি কারো কম আজকে আমরা জানবো কোন কোন খাবারগুলো খাবার কারণে চুল পড়া বন্ধ হবে এমনকি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে। চুল ঘন কালো ও মজবুত করবে চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
- প্রথমে আসে বাদামের কথা চিনা বাদাম, কাজুবাদাম, কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম ইত্যাদি বাদামে আছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ওমেগা-6 যা কিনা চুলের গোড়া শক্ত করে।
- হলুদ ও কমলা রঙ্গের ফলমূল ও শাকসবজি এগুলোতে থাকে ভিটামিন-এ। এগুলো খাবার চুলের ভিতরের ফলিকল ও চুলের গোড়াকে মজবুত করে।
- সামুদ্রিক মাছ অথবা তৈলাক্তক মাস যেসব মাছে ওমেগা-3 ফ্যাট আছে। যেমন ইলিশ মাছ, টুনা মাছ,কই মাছ, মলা মাছ, চাপিল ইত্যাদি এসব মাছ খেলে চুল ঘন কালো করতে সাহায্য করে এবং এগুলো প্রোটিনের উৎস।
- চুল সুন্দর রাখতে ডিম ও পালং শাক খুবই উপকারী। ডিমে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুল গজাতে সাহায্য করে। আর পালং শাকে আছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, আয়রন, ফোলেট যা চুলের ভেতর থেকে শক্তি যোগায়।
- ডাল ও বিভিন্ন ধরনের বীজ। সুন্দর চুলের জন্য ডাল খুব প্রয়োজনীয় জিনিস ডালে প্রচুর প্রোটিন, আয়রন, ফোলেট আছে যা চুল গজাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের বীজে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও আয়রন যা চুলের জন্য খুবই উপকারী যা চুলকে ভিতর থেকে গজাতে সাহায্য করে। তিসির বীজ, সিয়া=শীষের বীজ, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, চাল কুমড়ার বীজ, শিমের বীজ খেতে পারেন। এগুলো চুলের জন্য খুবই উপকারী।
- ছোলা অথবা টকফল। টক ফলে আছে ভিটামিন-সি যা কিনা চুলকে ঘন কালো ও মজবুত করে তাই টক ফল চুলের জন্য খুব উপকারী মালটা, লেবু ,কমলা, আমড়া ইত্যাদি বেশি বেশি খাবেন। আর ছোলাতে আছে চুলের উপকারী তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আয়রন, জিংক ও প্রোটিন যা চুলকে সুন্দর করে ও চুল পড়া বন্ধ করে ,নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- চুল পড়া বন্ধ করে নতুন চুল গজাতে আরো একটি জিনিস খুব সুন্দর ও ভালোভাবে কাজ করে সেটি হল তেল। নারকেল তেল অথবা মিষ্টি কুমড়ার তেল কিংবা জাইতুনের তেল এই তিনটি তেলি আপনার মাথার চুল পড়া বন্ধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে তাই নিয়মিত মাথায় তেল দিন চুল সুস্থ রাখুন।
প্রিয় পাঠক আশা করি আমি অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছি। নিশ্চয়ই আপনি আর্টিকেলটি পরে আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার খুঁজে পেয়েছেন। আর্টিকেলটিতে যে সমস্ত ভিটামিন, খাদ্য তালিকা ও জীবনযাপন সম্পর্কে বলা হয়েছে সবকিছু অনুসরণ করলে নিশ্চয়ই আপনি আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান পাবেন।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url