ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ
ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ
ডায়াবেটিস হল শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থা যা আমাদের শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা ইনসুলিন তৈরি করার সক্ষমতা হারায়। কিংবা ইনসুলিন একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে এর ফলে রক্ত শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে যায়। যাদের শরীরে ইনসুলিন এর ঘাটতি আছে অথবা ইনসুলিন নষ্ট হয়ে গেছে তাদেরকে যদি ইনসুলিন না দেওয়া হয় তাহলে তারা মারা যেতে পারে।
আমরা অনেকে বাইরে নানান ধরনের খাবার খায় রাস্তার ফাস্টফুড, তৈলাক্ত খাবার ভাজাপোড়া খাবার খেয়ে থাকি তখন শরীরে এক ধরনের পরিবর্তন আসে। তখন বোঝা যায় আমাদের শরীরে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, কিংবা ইনসুলিন আছে কিনা। আমরা যখন খাবার খাই আমাদের পাকস্থলী থেকে ইনসুলিন নিষ্কৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে আমরা যে খাবার খাচ্ছি সে খাবারের অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে নেওয়া।
ইনসুলিন এর উৎপাদন কমে গেলে অথবা ইনসুলিন কাজ করা বন্ধ করে দিলে তখন আমাদের শরীরে যে পরিমাণ গ্লুকোজ থাকে সে অবস্থানকে আমরা ডায়াবেটিস বলি। ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য খারাপ হওয়া, ওজন কমে যাওয়া, বারবার প্রস্রাব করা, খাবার খাওয়ার পরেও ক্ষুধা নাম মেটা, অতিরিক্ত ক্লান্তি আসা, কাটা জায়গা তাড়াতাড়ি না শুকানো। বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ থাকে ডায়াবেটিস হওয়ার তবে শুরু থেকে এগুলো বোঝা যায় না।
টাইপ-১ ডায়াবেটিসের লক্ষণ
টাইপ-১ ডায়াবেটিস অপ্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াবেটিস বা বাচ্চাদের ডায়াবেটিস নামেও এটি পরিচিত। শরীরের যেসব ক্ষেত্রে ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না সেই কারণগুলোর জন্য টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ গুলো হলো।
আরো পড়ুন: ডায়াবেটিস এর লক্ষন ও প্রতিকার
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া
- প্রস্রাবের প্রবণতা অনেক বেশি থাকা
- ওজন কমে যাওয়া
- খাবার পরেও ক্ষুধা লাগা
- দুর্বল বা ক্লান্তি লাগা
- অস্থির বা বিরক্তিবোধ হওয়া
- চোখে ঝাপসা দেখা
- বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া
- পেটে ব্যথা করা
- শরীরের চুলকানি হওয়া
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ
টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর থেকে টাইপ-২ ডায়াবেটিস আলাদা টাইপ-২ ডায়াবেটিস কে ইনসুলিন অনির্ভর ডায়াবেটিস বলা হয়। যেসব মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে তার মধ্যে ৯০% মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত রোগীর ডায়াবেটিস সাধারণত ৩৫ বছর বয়স পারে বোঝা যায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিস লক্ষণগুলো টাইপ-১ ডায়াবেটিস এর লক্ষণের মতোই কিন্তু টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। টাইম-২ ডায়াবেটিস এর লক্ষণ হল।
আরো পড়ুন: হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ
- খুব দ্রুত ওজন কমে যাওয়া
- অপ্রীতিকর গন্ধ পাওয়া
- হাত-পা ঝিনঝিন করা
- মূত্রনালীতে যন্ত্রণা হওয়া
- চোখে ঝাপসা দেখা
- মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা
- অতিরিক্ত তৃষ্ণা পাওয়া
- মেজাজ খিটখিটে থাকা
টাইপ ১ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর পার্থক্য
ডায়াবেটিস সাধারণত তিন ধরনের হয় টাইপ-১ টাইপ-২ এবং প্রগন্যনসি ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা একবার হলে মৃত্যু পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়। আমাদের দেশের ৯৫% মানুষেরই টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে আর টাইপ-১ ডায়াবেটিসকে বাচ্চাদের ডায়াবেটিস বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের ডায়াবেটিস নামে পরিচিত।
যাদের শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ একেবারে কম থাকে তাদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। আর প্রগন্যনসি ডায়াবেটিস সাধারণত নারীরা যখন গর্ভবস্থায় থাকে তখন দেখা দেয়। টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত টাইপ-২ ডায়াবেটিসের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে অল্প বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়লে তাদের শরীরে সাধারণত টাইপ-১ ডায়াবেটিস দেখা যায়।
টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কমবেশি একই হয়ে থাকে। এদের মধ্যে পার্থক্য বোঝা মুশকিল। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস বিভিন্ন খাবার খাওয়ার কারণে হয়ে থাকে এই খাবারগুলোর কারণে আমাদের শরীরের ইনসুলিন উৎপন্নকারী কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস এর খাবার
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা একবার হলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের রাখার জন্য আপনাকে জানতে হবে কোন খাবারগুলো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু খাবার রয়েছে যা টাইপ-১ এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। চলন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
- বাদাম
- মিষ্টি কুমড়া বীজ
- মাছ
- বেরি
- শস্যদানা
- ব্রকলি
- বাঁধাকপি
- অ্যাভোকাডো
- চা
- রসুন
- দারুচিনি
- অলিভ অয়েল
- মিষ্টি কুমড়া
টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ঔষধ
টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত কম বয়সী শিশু কিশোরদের হয়ে থাকে। সারা বিশ্বে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষ টাইপ-১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ-১ ডায়াবেটিস গুরুত্বপূর্ণ কোষ কে আক্রান্ত করে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে না এর ফলে রোগটি সৃষ্টি হয় টাইপ-১ ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে একটি ওষুধ টেপলিজুমার ভালো কাজ করে থাকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় type one ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীকে টেপলিজুমার ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়। টেপলিজুমার প্রয়োগ করার ফলে রোগের যে সময়ে টাইপ-১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল তার থেকে দুই বছর পর আক্রান্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই ওষুধটি খুবই কার্যকারী বিশেষ করে কম বয়সী শিশু দের জন্য খুব প্রয়োজনীয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টেপলিজুমার ব্যবহার করতে হবে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা
টাইপ-২ চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ করে বা ইনসুলিন পাম্প বা চিকিৎসা করা হয়। এগুলোর মাধ্যমে শরীরের কোষগুলিতে গ্লুকোজ প্রবেশ করে ইনসুলিন নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ায়। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় রক্ত শর্করার মাত্রা সাভাবিক করার জন্য ইনসুলিনকে ভালোভাবে ব্যবহার করতে হয়। এই চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা খাদ্য, ব্যায়াম, এবং ওজনের ওপর জোর দেয়। এই চিকিৎসা করার পরেও যদি রক্তের শর্করা বেশি থাকে তাহলে শরীরে ইনসুলিন ব্যবহার করা হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস ফুড চার্ট
টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ফাইবার, ভিটামিন এবং পুষ্টি ও খনিজ এর পরিমাণ বেশি থাকে এসব খাবার খাওয়া উচিত। টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন
- আপেল
- কমলা
- বেরি
- তরমুজ
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- পালং শাক
- শসা
- মুসুর ডাল ও ছোলা
- বাদাম
- সামুদ্রিক মাছ
- লাল মাংস
- মিষ্টি কুমড়া চাল কুমড়া শিম ইত্যাদির বীজ
টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঔষধ
সারা বিশ্বে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় এটিকে নির্মূল করা সম্ভব নয় তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কিছু ওষুধ ও খাবারের মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বিশেষজ্ঞদের মতে রক্তের শর্করা কমে যাওয়ায় ইনসুলিনের কর্ম ক্ষমতা কমে যায় ও শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি হয় যার ফলে এই রোগটি হয়ে থাকে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক ওষুধ রয়েছে যেমন গ্লুকোকটিকয়েড, থায়াজায়েড, অ্যান্টিসাইক্লোটিক, ফেনিটয়েট, বিটা ব্লকার ডাইবেটিস এর জন্য এই ওষুধগুলো ভালো কাজ করে থাকে তবে এই ওষুধগুলো সে বনের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে আমরা শুধু আপনাকে সঠিক ধারণা দিচ্ছি চিকিৎসা নয়।
ডায়াবেটিস একটি প্রাণঘাতী রোগ, এটি নির্মূল করা সম্ভব না তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব অতিরিক্ত ডায়াবেটিস মৃত্যুর কারণ ও হয়ে থাকে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। আর্টিকেলটিতে টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url